শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিশু-কিশোরদের দলে টানছে অপরাধী চক্র

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। নিজেদের অপরাধ রাজ্য বিস্তার ও দল ভারি করতে নানা কায়দা ও কৌশলে তাদের টানছে দলে। অপরাধী চক্রগুলোর ফাঁদে পা দিয়ে শিশুরাও জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর সব অপরাধে। সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই অপরাধী চক্রগুলো শিশু-কিশোরদের দলে টানছে। তারা নিজেদের হীন স্বার্থে শিশুদের ব্যবহার করছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবা উচিত। ভুল করলে তাদের পারিবারিক পরিবেশে সংশোধনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে শিশু-কিশোরদের প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে। ফলে কিশোর উন্নয়ন কেন্দে র পরিবর্তে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে। এতে তাদের সংশোধন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ ও মাদকের লোভ দেখিয়ে শিশু-কিশোরদের দলে টানছে অপরাধী চক্রগুলো। আবার অনেক সময় কথিত বড় ভাইয়া নিজেদের দল ভারি করতে শিশু-কিশোরদের অপরাধ জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা থাকাতে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশ ( সিএমপি)।’  জানা যায়, নিজেদের দলে শিশু-কিশোর থাকলে অনেক সময় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধ করেই পার পাওয়া যায় এ ধারণা থেকেই অনেক অপরাধী চক্র তাদের টার্গেট করেছে। তাই তারা শিশু কিশোরদের কখনো অর্থ, কখনো বা মাদকের টোপ দিয়ে দলে টানছে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগই ভাসমান পথশিশু। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের কিছু শিশু-কিশোরও অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা মূলত এলাকাভিত্তিক ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্য হওয়ার পরই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব শিশু-কিশোরদের দলে টানার পর খুন, চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও পরিবহনসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপে জড়িয়ে দিচ্ছে। নগরীর স্টেশন রোডে ফুটপাথে গড়ে উঠেছে ‘চোরাই মার্কেট’। চুরি-ছিনতাই করা জিনিসপত্র সেখানে কেনা-বেচা হয়। এখানে বিক্রি করা বিভিন্ন চোরাই পণ্যের অন্যতম জোগানদাতা হচ্ছে শিশু-কিশোর অপরাধীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রি ও পরিবহনের অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মাদক পরিবহন ও বিক্রি করতে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে ব্যবসায়ীরা। তবে কী পরিমাণ শিশু-কিশোর মাদক ব্যবসায় জড়িত সে পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।’ নগরীর কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘অপরাধী চক্রগুলো নতুন কৌশল হিসেবে শিশু-কিশোরদের টার্গেট করেছে। তারা প্রথমে টার্গেটকৃতকে মাদকাসক্ত বানিয়ে ফেলে। পরে মাদকের লোভ দেখিয়ে নানা অপরাধে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া টাকার লোভেও তারা অপরাধে পা দিচ্ছে।’ গত ৮ জুলাই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিজাত চোর চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিন কিশোর-কিশোরী রয়েছে। গত ২৯ জুন নগরীর আলমাস সিনেমা হল এলাকায় ছিনতাই করার সময় মো. আলাউদ্দিন নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৭ জুন রাতে হালিশহরের একটি মোবাইল সেট কেড়ে নেওয়ার জন্য সুমন নামে এক কিশোরকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, অন্তত ১০ জন কিশোর মিলে ছুরিকাঘাতে সুমনকে হত্যা করেছে। ২ মে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় তাসফিয়া আমিনের লাশ। এ ঘটনায় চার কিশোরসহ ছয় জনকে আসামি করে মামলা করেন তাসফিয়ার বাবা মো. আমিন। ১৬ জানুয়ারি জামালখান এলাকায় খুন হন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসপার। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজন কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর