বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

প্রতিদিন ডেস্ক

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

শেরেবাংলানগরে গতকাল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী শাসকরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। তার সরকার এই নদী ও খাল পুনঃখনন করে নাব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা, ২০১৮ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা, ২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। খবর বাসসের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বনের দস্যুতা দূর করার জন্য আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের পুনর্বাসন এবং বনের অপরাধ দমনের উদ্যোগের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য সহ-ব্যবস্থাপনা ও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ মহসিন চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পরিবেশ পদক, ২০১৮-এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদক ও চেক বিতরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা, আমাদের গর্ব রয়েলে বেঙ্গল টাইগারের ব্রিডিং পয়েন্ট উন্নত করা এবং এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাতে সুরক্ষিত হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেই ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পানিচুক্তি করার পর আমরা সুন্দরবনের গড়াই নদী খননের কাজ শুরু করি। গড়াই নদী খননের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ততা দূর হয়। এই লবণাক্ততা দূর করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। কারণ এই গড়াই নদীর হোগলাবন এলাকাটিই বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট।’

গড়াই, সালনাসহ সুন্দরবনের নদীগুলো খননের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মিঠাপানির স্রোত যত বেশি হবে, লবণাক্ততা ততই কমে আসবে। সেজন্যই এ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘একে একে প্রায় সব খালের মুখ আমরা খুলে দিয়েছি। এগুলোর মধ্যে ৮০টি এখনো বাকি আছে এবং ঘাসিয়ার খাল পুনঃখনন করে সেখান দিয়েই জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। তা না হলে জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত ১৪-১৫ কিলোমিটার ঘুরে সালনা নদী দিয়ে আসতে হতো। এখন খুব সহজেই জাহাজগুলো মোংলা বন্দরে চলে আসতে পারছে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, সরকার বদল হলে পরবর্তী সরকারের ভিতর যদি এই সচেতনতা না থাকে যে কীভাবে দেশকে সুরক্ষিত করতে পারি বা দেশের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি, তাহলে সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, যারা পঁচাত্তরের পর ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কাছে চিংড়ি চাষ করে পয়সা বানানোটাই সব থেকে বড় ছিল। কিন্তু পরিবেশ বিনষ্ট হবে, জীববৈচিত্র্যের সমস্যা হবে তা তারা কোনো দিনও ভাবেনি। আওয়ামী লীগকে এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের পরিবেশ, মানুষের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নয়নের দিকেই দৃষ্টি দেওয়া হয়। যে কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় এ কাজগুলো করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর