বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল

বর্ষায় নাও, শুকনায় পাও। অর্থাৎ বর্ষাকালে নৌকা, আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া হাওর অঞ্চলে বিকল্প আর কিছু ছিল না। এখন দিন বদলেছে। পিছিয়ে নেই হাওর এলাকা। উজান এলাকার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে হাওরে। আর এসব সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কারণে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। হাওরে কোনোদিন পাকা সড়ক হবে, সেটা কখনো ভাবতেও পারেনি হাওরবাসী। বর্ষা মৌসুমে নৌপথই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। এখন হয়েছে অল ওয়েদার রোড বা আভুরা সড়ক, হয়েছে সাব মার্সিবল সড়ক বা ডুবো সড়ক। শুধু এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম নয়, জেলা সদরসহ রাজধানী ঢাকার সঙ্গেও সড়ক পথে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে হাওরের। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানও। নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় নির্মিত হয়েছে বেড়িবাঁধ। হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে সংযুক্ত করে নির্মিত হচ্ছে অল ওয়েদার রোড, অর্থাৎ আভুরা সড়ক। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্বাবধানে ২৯ দশমিক ৭২৩ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮৭৪ কোটি টাকা। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম জানান, সড়কটি নির্মিত হলে হাওরের মানুষ জেলা শহর কিশোরগঞ্জ, পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার সার্বিক উন্নয়নে হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের (এইচএফএমএলআইপি) অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক, সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মিত হয়েছে। হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (হিলিপ) এর আওতায় প্রায় সাড়ে ২৬ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ৩৩ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরো হাওর অঞ্চল এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মনির উদ্দিন মজুমদার জানান, অল্প কিছু এলাকা ছাড়া পুরো হাওর এলাকা এখন বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায়ও এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এক সময় মাধ্যমিক স্তর পার হয়ে আসতে হতো জেলা শহর বা তার আশপাশের কোনো এলাকায়। এখন হাওরের তিনটি উপজেলায় হয়েছে তিনটি কলেজ। হাওরের হাসপাতালগুলোতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। হাওরের মানুষ বেশিরভাগ চিকিৎসা সুবিধা এখন নিজ এলাকাতেই পাচ্ছেন। ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান বলেন, আগে হাওরের মানুষকে তুচ্ছ -তাচ্ছিল্য করে ডাকা হতো ‘ভাইট্টে গাবর’। এখন আর সে দিন নেই। যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন, তারাই এখন হাওরের উন্নয়ন নিয়ে ঈর্ষাকাতর হন। সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাত ধরে হাওরে উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বেশিরভাগ কাজ তিনি নিজেই সমাপ্ত করেছেন। বাকি কাজগুলো আমি করে যাচ্ছি। শহরের মানুষ দল বেঁধে এখন হাওরের উন্নয়ন দেখতে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসায় হাওরে বিভিন্ন কল কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশের মডেল হবে কিশোরগঞ্জের হাওর।

সর্বশেষ খবর