বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুনি ছিলো মাইকিংয়ে

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি ছিলো মাইকিংয়ে

সনু বাবুর দুই ছেলে। ভাড়া থাকেন ঢাকার অদূরে সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার আউয়ালের বাড়িতে। বড়  ছেলে জয়ের বয়স সাত বছর। ছোট ছেলে জয়ন্তের বয়স ৩ বছর। গত ১ জুলাই সকাল ৯টায় বাসার সামনে  খেলছিল জয়ন্ত। কিন্তু ১০টার পর আশপাশের কোথাও আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সনু বাবু একই বাড়ির ভাড়াটে আল আমিনকে নিয়ে পুরো এলাকায় মাইকিং করে বেড়ান। কিন্তু সন্ধ্যার পরও জয়ন্তের কোনো  খোঁজ পাওয়া যায় না। পরে রাতে জয়ন্তের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বাবা সাভার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনা তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজগার আলীকে।

রাত পৌনে            ১০টায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সনু বাবুকে ফোন করে। ফোনে বলে, ‘আপনার ছেলে আমাদের কাছে আছে, বিকাশ করলে আপনার ছেলেকে ফেরত পাবেন, তা না হলে আপনার ছেলের ক্ষতি হবে।’ পরদিন ২ জুলাই অপহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৭ হাজার টাকা পাঠান জয়ন্তের বাবা সনু বাবু।  মুক্তিপণ দাবি করার পর পুলিশ কর্মকর্তা আজগার আলী নিজেকে জয়ন্তের বাবার মামা পরিচয় দিয়ে জয়ন্তদের বাড়িতে যান। এসআই আজগার ছদ্মবেশে জয়ন্তদের বাড়িতে যান। আল আমিন তখন বলেছিলেন, অপহরণকারীদের টাকা দিলে জয়ন্তকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আল আমিনের আচরণ সন্দেহজনক হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।  তিন বছরের শিশু জয়ন্ত নিখোঁজ হওয়ার পর তার খোঁজে মাইকিং করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আল আমিন। শিশুটির মা-বাবাকে আশ্বাস দেন, জয়ন্তকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে। সেই আল আমিনই শিশু জয়ন্তকে খুন করার কথা স্বীকার করে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জয়ন্তকে নৃশংসভাবে খুন করার চার দিন পর সন্দেহভাজন খুনির নাটকীয় অভিনয়ের বিষয়টি পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে। এ খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে আল আমিন (১৮) ও নাছির শেখকে (২৬) গ্রেফতার করেছে সাভার থানার পুলিশ। আল আমিন ঢাকার আদালতে জয়ন্তকে খুন করার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর নাছির শেখকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশ বলেছে, আল আমিন তার খালাতো বোনের স্বামী নাছিরকে নিয়ে জয়ন্তকে হত্যা করে। পরে আল আমিন ফোন করে জয়ন্তের বাবার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। জয়ন্তকে কেন খুন করা হয়, সে ব্যাপারে এসআই আজগার বলেন, নাছির শেখ এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর আল আমিন বেকার। কিছুই করতেন না। টাকা আদায় করার জন্য জয়ন্তকে অপহরণ করেন তারা।  জয়ন্তের মা-বাবা দুজনে সাভারের গার্মেন্টে চাকরি করেন। জয়ন্তের বাবা সনু বাবু বলেন, ‘আমরা কল্পনাও করিনি যে, আল আমিন আমার ছেলে জয়ন্তকে অপহরণ করতে পারে, খুন করতে পারে। জয়ন্তকে যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন আল আমিন মাইকিং করেছে। জয়ন্তকে খুঁজে পাওয়ার জন্য নানা পরামর্শ দিয়েছে। অথচ আল আমিনই আমার নিষ্পাপ ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর