বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাভের লোভ আসল শেষ

মির্জা মেহেদী তমাল

লাভের লোভ আসল শেষ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নতুন অফিস খুলেছে। নাম সিদ্দিক স্টোর। অফিসের মালিক ইব্রাহিম আলী। প্রথম দিকে অফিসের কাজকর্ম কিছুই ছিল না। ধীরে ধীরে অফিসের কাজ শুরু হয়। লোকমুখে স্থানীয়রা জানতে পারে, ওই অফিস এলাকার লোকজনকে ধনী করে দিচ্ছে। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ দিচ্ছে। এক লাখ টাকা দিলেই মাসে পাওয়া যাবে ১৩ হাজার টাকা। সিদ্দিক স্টোর এমন প্রচারণা চালায় ধুমছে। অনেকেই টাকা দিতে শুরু করে। সিদ্দিক স্টোর কয়েকজন আমানতকারীকে চুক্তি মতে লাভের অংশের টাকা পরিশোধ করতে থাকে। গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এ ঘটনার খবর। এলাকার লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকে। শত শত মানুষ। বেশি লাভের আসায় সিদ্দিক স্টোরে মানুষের লাইন পড়ে। টাকা এনে তুলে দিচ্ছে ইব্রাহিম আলীর কাছে। কেউ জমি বন্ধক রেখে, কেউ গরু ছাগল বিক্রি করে তুলে দিচ্ছে টাকা। মানুষ যেন নেশায় পড়ে গেছে। এভাবেই চলতে থাকে কয়েক মাস। কিন্তু হঠাৎ লাপাত্তা ইব্রাহিম। সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানও। গত ১০ জুলাই রাতের আঁধারে পালিয়েছে ইব্রাহিম। পুলিশ জানায়, ইব্রাহিম আলী এক দিনেই ১৩টি ট্রাক ক্রয় করে সড়কে নামিয়েছে। প্রতারণার শিকারদের মধ্যে রয়েছে চা বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, রিকশাচালক, কৃষক, হুডি ও মাদক ব্যবসায়ী। বারুইপাড়া আলীপুরের তোজাম্মেল হক জমি বিক্রি করে ২৭ লাখ টাকা আমানত হিসেবে সিদ্দিক স্টোরে জমা করেন। এর বিপরীতে তিনশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ও সোনালী ব্যাংক গোদাগাড়ী শাখার একটি চেক প্রদান করে সিদ্দিক স্টোর। চুক্তি অনুযায়ী লাভের অংশের প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকার বিপরীতে ৩৯ হাজার টাকা তিন মাস পর আমানতকারীকে দেওয়ার কথা রয়েছে। লাভের অংশেরসহ আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে গত ১০ জুলাই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ইব্রাহিম আলী। ইব্রাহিম আলীর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। উপজেলার দিয়াড় মানিকচকের কৃষক গিয়াসউদ্দীন ও তার ছেলে মিনারুল ৬ লাখ টাকা, গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মহিশালবাড়ী গ্রামের জরিনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে জমানো ৫০ হাজার টাকা সিদ্দিক স্টোরে জমা রেখেছিলেন। তোজাম্মেল, গিয়াসউদ্দীন ও জরিনার মতো উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৫ শতাধিক ব্যক্তি সিদ্দিক স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিমের কাছে প্রায় ২শ কোটি টাকা আমানত হিসেবে জমা রয়েছে। এদের মধ্যে বারুইপাড়ার ইলিয়াস আলী ৫০ লাখ টাকা, দিয়াড় মানিকচকের জহুরুল মেম্বারের ৩০ লাখ, শরিফুল মেম্বারের ২৫ লাখ, মহিশালবাড়ীর মহিউদ্দীন কলেজপাড়ার জমিরউদ্দীনের ২৫ লাখ ও লোকমানের ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। আমানত জমাদানকারীরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ইব্রাহিম আলীর মহিশালবাড়ির বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। বাড়িতে শুধু তার মা ছাড়া কেউ নেই। তারা জানে না ইব্রাহিম কোথায় আছে। আমানতকারীরা এখন অবস্থান নিয়েছে প্রতারক ইব্রাহিমের বাড়িতে। ইব্রাহিম আলীর বাড়িতে অবস্থান নেওয়া আমানতকারীদের বক্তব্য, ইব্রাহিম আলী ঢাকার নামিদামি কয়েকটি কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রফতানি করে বলে আমানতকারীদেরকে কাগজপত্র দেখিয়ে আস্থা অর্জন করে। পরে আমানতকারীরা জানতে পেরেছে কোম্পানির সব কাগজপত্র ভুয়া। ইব্রাহিম আলী প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে কয়েক জনকে লাভের অংশের টাকা প্রদান করে ও কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকার কাগজপত্র দেখায়। সারা দেশেই এমন হায় হায় কোম্পানি সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বনে যাচ্ছে। গ্রামের অসহায় ও দরিদ্রদের ঘরবাড়ি ও গভীর নলকূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক দেলোয়ার হোসেন ভুট্টোকে আটক করেছেন র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের পূর্বকেশবকাঠি গ্রাম থেকে আটককৃত দেলোয়ার হোসেন ভুট্টো ওই গ্রামের মৃত আক্তার আলী ওরফে আক্কেল আলীর পুত্র ও উপজেলার মুন্সিরতালুক আলিয়া মাদ্রাসার সুপার। র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানান, দেলোয়ার হোসেন ভুট্টো ২০১৬ সালে অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে ঘরবাড়ি ও গভীর নলকূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর