শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করেছে পুলিশ। আজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। গতকাল বিকালে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন কমিশনার গোলাম কিবরিয়া।

হলেন— সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কালিয়াকাপনের ফয়জুল হাসান ফয়েজ, তার বন্ধু দিরাই থানার উমেদনগর গ্রামের সাদেকুর রহমানের ছেলে সোহাগ মিয়া, ফয়জুলের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুর রহমান ও ভাই এনামুল হাসান। পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ফয়জুলকে একটি ৮ জিবি মেমোরি কার্ড দেয় তার বন্ধু সোহাগ। ওই মেমোরি কার্ড থেকে জসিম উদ্দিন রাহমানী, তামিম উল আদনানী এবং অলিপুরী হুজুরের ওয়াজ শুনে ফয়জুল জিহাদের ব্যাপারে প্রভাবিত হন। জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা উন্মুক্ত তরবারি বইটি পড়ে এবং তিতুমীর মিডিয়ার ভিডিও দেখে ফয়জুল ধারণা করে, জাফর ইকবাল একজন নাস্তিক। দাওয়াহ-ইলাল্লাহ নামক ওয়েবসাইটে তিনি জাফর ইকবালের ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ বইয়ের ছবি দেখে এবং সেখানে বিভিন্ন মন্তব্য দেখে ধারণা করে, নবী সোলায়ামান (আ.)-কে কটাক্ষ করে এ বইটি লেখা হয়েছে। তখন তিনি জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ছুরি কিনে এবং তিন-চার মাস ধরে জাফর ইকবালকে হত্যার সুযোগ খোঁজতে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার বিভিন্ন স্থিরচিত্র, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা সিটি ক্যামেরার ফুটেজ, মোবাইল কললিস্ট ও অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, ফয়জুল নিজেই জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে।

আহত জাফর ইকবালকে প্রথমে ওসমানী মেডিকেল ও পরে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় মামলা করেন। মামলায় ফয়জুল হাসানকে প্রধান ও আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা হামলার অভিযোগে ফয়জুল হাসানকে আটক করেন। গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর তাকে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ পৃথকভাবে ফয়জুলের বাবা, মা, ভাই, মামা ও বন্ধুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়।