বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
উধাও বড়পুকুরিয়ার কয়লা

আওরঙ্গজেবকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়লা বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল আওরঙ্গজেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক উপপরিচালক মো. শামসুল আলম গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। নুরুল আওরঙ্গজেব এখন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি হিসেবে কর্মরত। ১ লাখ ৪৫ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ জুলাই মধ্যরাতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা দুদকের কাছে হস্তান্তরিত হয়। ওই মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা খোলাবাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূর-উজ-জামান চৌধুরী, উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) এ কে এম খালেদুল ইসলামসহ খনির ব্যবস্থাপনায় জড়িত অন্য আসামিরা ওই কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িত। অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ব্যবস্থাপক, উপব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার ১৯ আসামিসহ পেট্রোবাংলার ২১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞায় চিঠি দেয় দুদক। ১৯ আসামিসহ নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মো. নুরুজ্জামাম চৌধুরী, উপমহাব্যবস্থাপক খালেদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) জাহিদুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক (সেইফটি ম্যানেজমেন্ট) আকরামুল হক, উপব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) খলিলুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) মোরশেদুজ্জামান, উপব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহিদুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন নাথ বর্মণ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান, উপমহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অপারেশন) জোবায়ের আলী, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) আবদুল মান্নান পাটোয়ারি ও গোপালচন্দ্র সাহা, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (এক্সপ্লোরেশন), কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল কাশেম প্রধানিয়া ও মোশারফ হোসেন।

যা বললেন আওরঙ্গজেব : দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব বলেছেন, ‘আমি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। এমডি হিসেবে ওই সংস্থায় পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করেছিলাম।’ জালিয়াতির মাধ্যমে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা  খোলাবাজারে বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব বলেন, ‘আমি ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি। এই অল্প সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে কয়লাখনির দুর্নীতির বিষয়ে দুদক আমাকে ডেকেছিল। আমার কাছে জানতে চেয়েছিল কীভাবে কয়লা প্রোডাক্ট হয়,  কোথায় যায়, এসব বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে তথ্য জানতে  চেয়েছিল।’ নুরুল আওরঙ্গজেব বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর