শিরোনাম
শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসতে হবে : মেয়র লিটন

উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসতে হবে : মেয়র লিটন

‘আমি যখন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তখনই নগরীকে উন্নত দেশের মতো করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কাজও শুরু করেছিলাম। মানুষ যাতে একবার ঘুরে গেলে রাজশাহীকে ভুলতে না পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, নাগরিক সেবা—সব দিক থেকে রাজশাহী হবে সেরা। কিছু ক্ষেত্রে আমার সময়েই সেরা হয়েছিল। কিন্তু তারপর কী হয়েছে তা আপনার সামনে দৃশ্যমান।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নতুন নগরপিতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়র থাকাকালে আমি রাজশাহী শহরকে আগের রাজশাহীর চেয়ে অনেকটা পরিবর্তন করতে পেরেছিলাম। পরিচ্ছন্ন করতে পেরেছিলাম, সবুজ করতে পেরেছিলাম, নতুন বড় বড় রাস্তা করতে পেরেছিলাম, যানজটমুক্ত শান্তির শহর, উঁচু উঁচু শপিং মল করতে পেরেছিলাম, বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পার্কগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়েছিলাম। এই যে একটি পরিবর্তন আমি করতে পেরেছিলাম, সেটি পরবর্তী সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা ধরে রাখতে পারেননি। ধরে রাখতে না পারার কারণে আবার সেই দুর্গন্ধ, ময়লার স্তূপ, ড্রেন-নর্দমার ময়লা পরিষ্কার না করা, মশার উৎপাত এবং নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো নষ্ট করে দেওয়া—সব মিলিয়ে রাজশাহী আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে। দায়িত্ব নিয়ে আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আবারও উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসা। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি রাজশাহী একটি অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহর। কিন্তু এই শহর গত পাঁচ বছরে পিছিয়ে গেছে উন্নয়নের দিক থেকে। বলা যায়, গোটা নগরীতে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি। এ অবস্থায় উত্তরণ দরকার। নাগরিকদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে আবার। আমি যে কারণে নির্বাচনের আগে স্লোগান দিয়েছিলাম ‘চলো বদলে দিই রাজশাহী’, আমার নির্বাচনী এই স্লোগান বাস্তবায়ন করতে চাই উন্নয়ন দিয়ে। লিটন বলেন, রাজশাহীর মাটি আমার রক্ত-মাংসে লেগে আছে। এখানকার উন্নয়ন এবং রাজশাহীবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আমার বাবা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। তার সন্তান হিসেবে আমিও এখানকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। পরিচ্ছন্ন, সবুজে ভরা, বেকারত্বমুক্ত এবং প্রকৃত শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি রাত-দিন। রাজশাহীর উন্নয়নে আমাদের দল-মত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে।

নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম গ্যাস সংযোগ আবার চালু করার। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, এ অঞ্চলের মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আবারও গ্যাস সংযোগ চালুর ব্যবস্থা করব। দায়িত্ব নিয়ে আমার লক্ষ্য হবে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে গার্মেন্টশিল্প, চামড়াশিল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক দ্রুত বাস্তবায়ন করে লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানা ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা, রাজশাহী জুটমিল সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করা—যেমন আম, টমেটো, আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পাটশিল্প গড়ে তোলা, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কুটিরশিল্প (এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায়) উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত ও সহায়তা করা, যাতে করে এই নগরীতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীকে শিক্ষানগরী বলা হলেও এখানকার শিক্ষার মান এখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে সে লক্ষ্যে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত বাস্তবায়ন করা, রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, শিক্ষানগরী রাজশাহীতে মানসম্পন্ন নতুন একাধিক বালক ও বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজে স্থাপন করা, রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ সংগীত, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা,  রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতালের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ করা, নগরীতে অবস্থিত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও মান উন্নয়ন করে শিশু শিক্ষা ও ভর্তি সমস্যার সমাধান করা, রাজশাহীতে অনগ্রসর বস্তিবাসী ও বিদেশে চাকরি পেতে আগ্রহীদের জন্য জনশক্তি রপ্তানিমুখী বিশেষ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ইংরেজি, আরবি, স্প্যানিশ, চাইনিজসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষা শিক্ষার জন্য সার্টিফিকেট কোর্স চালু করাসহ নানা পদক্ষেপ নিতে চাই, যাতে করে বিশ্বের উন্নত শহরের মতো বাইরের দেশের ছেলে-মেয়েরা রাজশাহীতে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা করতে পারে। এর ফলে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ যেমন গড়ে উঠবে, তেমনি রাজশাহী হবে প্রকৃত মডেল শিক্ষানগরী। লিটন বলেন, গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি রাজশাহী নগরী খেতাব পেয়েছে। কিন্তু সেটিকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। গত পাঁচ বছরে এই রাজশাহীকে অনেকটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এবার আমি নগরীর চারদিকে রিং রোড ও লেক নির্মাণ করব, নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগার স্থাপন করব, নগরীর অনুন্নত এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে, সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পের আওতায় অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন, যানজট নিরসনে তালাইমারী থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড়, সাহেববাজার থেকে নিউমার্কেট হয়ে স্টেডিয়াম, বর্ণালীর মোড় থেকে কামারুজ্জামান চত্বর হয়ে ভদ্রার স্মৃতি অম্লান পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ ও নগরীর ব্যস্ততম মোড় এবং রেলক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণ, হজরত শাহ মখদুম (রহ.)-এর মাজার কমপ্লেক্সসহ নগরীর ঐতিহাসিক স্থানগুলোর উন্নয়ন করে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেব। লিটন বলেন, আমার সময়ে কয়েকটি প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সদ্যবিদায়ী মেয়র সেই সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করেননি। ফলে এখন নতুন করে আমাকে আবার সেই সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। রাজশাহী গত পাঁচ বছরে অনেক পিছিয়ে গেছে শুধু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমি এ অঞ্চলের উন্নয়নে নেওয়া আমার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরব। আমি আগে যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখনো প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিরাশ করেননি। রাজশাহীর উন্নয়নে বহু টাকা নিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও উন্নয়নের সেই ধারা ফিরিয়ে আনতে আমার সব চেষ্টা থাকবে। মেয়র লিটন বলেন, দায়িত্ব নিয়ে দাফতরিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সবকিছু আবার ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য আমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে। জনগণ আমাকে ভালোবেসে বিপুল ভোট দিয়েছেন। আমি তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করে যাব।

সর্বশেষ খবর