সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আনফিট চার লাখ গাড়ি রাজধানীতে

জোড়াতালির গাড়িতে দুর্ভোগ, কোনো কোনোটির বয়স ৩০ ছুঁই ছুঁই

সাঈদুর রহমান রিমন

আনফিট চার লাখ গাড়ি রাজধানীতে

ইঞ্জিনে ভয়ানক শব্দ তুলে নিকষ কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। দরজা-জানালা ভাঙা, স্থানে স্থানে ছোট-বড় ফোকলা। এসব নিয়েই ছুটে চলা পরিবহনের যন্ত্রণা থেকে কোনোভাবেই রেহাই মিলছে না। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে লক্কড় ঝক্কড় যানবাহন। বাসের বডির অংশ খুলে পড়েছে। কোনোটার সামনের বিরাট অংশই ভাঙা। পেছনের বাম্পার খুলে ঝুলে আছে। জানালা বলতে কিছু নেই। ভিতরে বসার সিটগুলো নড়বড়ে। জোড়াতালি দিতে দিতে সিটকভারের ওপর দুর্ভিক্ষের ছাপ পড়ে গেছে। কোনোটির রং চটা, কোনোটির ছাল ওঠা। বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলাচলের অযোগ্য এমন হাজার হাজার গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে মহাসড়ক।

হর্ন, ওয়াইপার ও ফিটনেস ভালো না থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে ঢাকাতেই অন্তত কয়েক হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করছে।  এসব গাড়ির সঙ্গে যোগ হয়েছে ফিটনেসবিহীন ট্রাক, লরি, সিএনজি, টেম্পো, মাইক্রো, প্রাইভেটকার। সব মিলিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা চার লাখ আনফিট গাড়ি রাজধানী জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেগুলোতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন মানুষজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপেক্ষা ও একশ্রেণির পরিবহন নেতার ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে চলছে গাড়িগুলো। বিআরটিএ সূত্র জানায়, সারা দেশে বর্তমানে রেজিস্টার্ড যানবাহন প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে মোটরসাইকেল প্রায় ১১ লাখ এবং বাস, মিনিবাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন প্রায় ১০ লাখ। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি উন্নত সেবা দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে নানা কোম্পানির ব্যানারে যেসব গাড়ি নামানো হয়েছে সেগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ছয় হাজার বাস-মিনিবাসে একটা বড় অংশই সনদ পাওয়ার অযোগ্য। এ ছাড়া শত শত বাস-মিনিবাসের বয়স ত্রিশ বছর ছুঁই ছুঁই করছে। এ হিসেবে রাজধানীর রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো বেশির ভাগ বাস-মিনিবাসই ফিটনেসবিহীন। কিন্তু গাড়ির মালিক, রুট কমিটি, ট্রাফিক বিভাগ কারও যেন সেদিকে দেখারও ফুসরত নেই। সবাই ছুটছেন টাকার ধান্ধায়। ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ‘জ’ সিরিয়ালের। এগুলোর বয়স ২০/২২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী যানবাহনের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রীরা। ওই রুটে বলাকা, তুরাগ, ছালছাবিল, অনাবিল, সুপ্রভাতসহ বিভিন্ন কোম্পানির আওতায় ১২ শতাধিক বাস-মিনিবাস চলাচল করলেও অধিকাংশ গাড়িরই কাগজপত্র ঠিক নেই। সবগুলো গাড়িই চলাচল করে ট্রাফিক বিভাগকে ম্যানেজ করে। একইভাবে মিরপুর-পল্লবী থেকে গুলশান-বাড্ডা রুটে চলাচলকারী ছয়টি কোম্পানির চার শতাধিক গাড়ি চলাচল করলেও রুট পারমিট ছাড়াই চলছে অসংখ্য পরিবহন। বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ ত্রুটিযুক্ত কোনো গাড়িকে রুট পারমিট দেয়নি। ঢাকায় সহস্রাধিক বাস-মিনিবাসের ফিটনেসের মেয়াদ তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও ফিটনেস সার্টিফিকেট মিলছে না। বিআরটিএ-তে কম্পিউটারাইজড ফিটনেস ব্যবস্থাপনা চালুর পর থেকেই চোরাগোপ্তা পথে ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানেজ করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সদর্পে  চলছে বিপজ্জনক গাড়িগুলো। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, যানবাহনগুলোকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার পর রাস্তায় চলাচলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে বিআরটিএর কাগজপত্রের নিয়মনীতিতে যা-ই থাক বাস্তবতা ভিন্ন। বিআরটিএ’র যাবতীয় নিয়ম কানুন ও পরীক্ষা শেষে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সামান্য সংখ্যক যানই উতরে যেতে পারে। কিন্তু ব্যবহারের অনুপযোগী যানবাহন মালিকদের রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে গাড়িগুলো কার্যকর পরীক্ষা ছাড়াই সনদ পেয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। অন্যদিকে জনবল সংকটে বিআরটিএ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ফিটনেস নৈরাজ্যের এটিও অন্যতম কারণ বলে সূত্র জানায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর