সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ডিজিটাল ফাঁদ গ্রামশুদ্ধ ধরা

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর ডিজিটাল ফাঁদ গ্রামশুদ্ধ ধরা

কার হাতে নেই মোবাইল ফোন। হোক ধনী বা গরিব ভিখারী। অত্যাবশ্যকীয় অতি প্রয়োজনীয় আর সহজলভ্য হওয়ার কারণে মোবাইল ফোন এখন মানুষের হাতে হাতে। তাই মানুষের সেই আগ্রহকে পুঁজি করে সিরাজগঞ্জে আউট সোর্সিং ব্যবসা ‘টাচ আর্ন’ নামে একটি ওয়েবসাইট ডিজিটাল প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় ৪০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহক এখন হতাশ। অথচ কিছুদিন আগেও মোবাইল ফোনে এই ওয়েবসাইটে ৬ হাজার ৪০০ টাকায় আইডি খুলে প্রতিদিন ৭/৮ মিনিট কাজ করেই আয় হতো ২ ডলার বা তার সমমূল্যের বাংলাদেশি টাকা। তাই স্কুল, কলেজ পড়ুয়া বেকার যুবকদের মতো টাকা আয়ের এই সহজ পথে হেঁটেছিল সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানাসহ অন্যান্য জেলার অনেক মানুষ। প্রথম দিকে কৌশলী প্রতারক চক্র ডলার আয়ের লোক দেখানো সুবিধা দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও হঠাৎ গ্রাহকের আমানতের টাকা নিয়ে ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে পালিয়েছে। এরপর থেকে প্রতারিত গ্রাহকরা ৫ উদ্যোক্তাসহ তাদের অর্ধশতাধিক সহযোগীদের আর খুঁজে পাচ্ছে না। তবে পুলিশ বলেছে, অভিযোগ দিলেই নেবে যথাযথ ব্যবস্থা। এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র রবিউল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, ১০ম শ্রেণির ছাত্র শামীম হোসেন, তাঁত শ্রমিক ইব্রাহীম হোসেন, খোকশাবাড়ি গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র শরিফুল ইসলাম, রুপসী গ্রামের আবদুল কাদের, শিবপুরের শাহীন, গোপালপুরের আলী আকবার, বেলকুচির তামাইয়ের রনি তালুকদার এবং বেলকুচি, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলাসহ দেশের হাজার-হাজার তরুণের মাঝে এখন শুধুই হতাশা। ‘টাচ আর্ন’ নামে একটি ওয়েবসাইট ডিজিটাল প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন উধাও। তাদের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, টাচ আর্ন নামে একটি ওয়েবসাইটে ৬ হাজার ৪০০ টাকায় আইডি খুলে ৭/৮ মিনিট এন্ড্রোয়েড মোবাইলে কিছু বিজ্ঞাপন চিত্র দেখলেই দৈনিক ২ ডলার করে নিজের আইডিতে জমা হতো। আর এভাবে তা ২৫ ডলারে পরিণত হলে এর সমপরিমাণ টাকা দিয়ে দিত। প্রথম দিকে লেনদেন যথানিয়মে চললেও হঠাৎ করে কয়েকদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৪০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দেয় ওয়েবসাইটটির ৬ জন শীর্ষ এডমিন। সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতারিত হওয়া গ্রাহকরা এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে পাওনা টাকা ফেরত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে একটি সমাবেশ করে। সমাবেশে এনায়েতপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ সদর থানার ২ শতাধিক প্রতারণার শিকার ছাত্র/শিক্ষক, শ্রমিকেরা অংশ নেয়। তারা জানান, এনায়েতপুরে অবস্থিত খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের ছাত্র বেলকুচির মিটুয়ানী গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে আবদুল আলীম তীব্র (২৩), একই বিভাগে অধ্যয়নরত একই গ্রামের বেলাল মেকারের ছেলে সুজন রেজা (২৪), তফাজ্জল হোসেনের ছেলে তোফায়েল হোসেন (২২), মোবারক হোসেন (২২) এবং উল্লাপাড়ার ইমরান শেখ (২৮) মিলে ওয়েবসাইটটি বানিয়ে কৌশলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এতে আইডি করে দেয়। তারা লোভ দেখায় উল্লিখিত টাকায় কথিত সিঙ্গাপুরী ওয়েবসাইটে আইডি করলে মাসে অল্প কাজ করে কমপক্ষে ৩ হাজার ৯০০ টাকা আয় সম্ভব। কয়েক মাস তা যথানিয়মে চললে বিষয়টি সমগ্র জেলা তথা দেশজুড়ে তাদের অর্ধশতাধিক সহযোগীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাহক বেড়ে তা প্রায় ৪৩ হাজারে পরিণত হয়। হঠাৎ করেই গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে প্রতারক আলীম, সুজন রেজা, তোফায়েল, মোবারক, ইমরান ও তাদের সহযোগীরা আমানতের ৪০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এদের সহযোগী খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের কজন শিক্ষক বিবিএ বিভাগের ছাত্র বেলকুচির সরাতৈল গ্রামের কামাল হোসেন, এনায়েতপুর থানার রুপসী গ্রামের রুবেল হোসেন, আলতাফ মাস্টারের ছেলে আসিফ হোসেন, আতিক হোসেন, গ্রামের ইমরান হোসেন, এনায়েতপুর গ্রামের ব্লক জহুরুলের ছেলে রিমন হোসেন, তামাইয়ের আলামিন হোসেন, বেলকুচির সুবর্ণসাড়ার রেজা, মিটুয়ানীর ফিরোজ হোসেন, বেতিলের আবদুস ছালাম, বাহ্মণগ্রামের হাজী মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন, একই বিভাগের ছাত্রী মারিয়া খাতুন, বিবিএর ছাত্রী বিতু।

এরা সবাই খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত অবস্থায় এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে পুরোপুরি নিয়োজিত থেকে হাজার-হাজার গ্রাহক সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। এরা সবাই এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার এনায়েতপুর থানার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের শাহীন খন্দকার, বাহ্মণগ্রামের আলামিন, খোকশাবাড়ির শরিফুল ইসলাম, বেলকুচির বিশ্বাসবাড়ির সিফাত হোসেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামের আমানুল্লাহ জায়ের জানান, আমরা পুরোপুরি না জেনে এর সঙ্গে জড়িত হয়েছি। এদিকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই প্রতারকদের বেশির ভাগদেরই বাড়ি বেলকুচি উপজেলার মিটুয়ানী গ্রামে। প্রতারক সুজন রানা এবং আবদুল আলীমের বাড়িতে তাদের পরিবারসহ কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, এদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর