পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়ককে হত্যার ঘটনা আমরা শুনেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে পাল্টে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের চরিত্র। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এক ঝটকায় এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। অন্য রাষ্ট্রনায়কদের হত্যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেক পার্থক্য আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা করা হলো। জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে দেশের মাটিতে হত্যা করা হলো। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় প্রতিবাদ হতে পারত, হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি আর তার পরিবার জীবন দিয়ে গেলেন। এ সময় অন্য সবাই যদি এগিয়ে আসত তাহলে ইতিহাসটা ভিন্ন হতে পারত। বাকশালের নেতারা কেউ প্রতিবাদে বেরিয়ে এলেন না। এটা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রতারণা, জাতীয় নেতার সঙ্গে প্রতারণা। বাকশাল গঠন বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নাম দিয়ে গঠন করা হলো বাকশাল। বাকি সব দলকে নিষিদ্ধ করা হলো। তখন বাকশালের বাইরে দল ছিল ন্যাপ, জাসদ ও কমিউনিস্ট পার্টি। জাসদ ছিল ক্যাডারভিত্তিক দল। বাকশালে অন্য দলেরও লোক ছিল। যেহেতু অন্য দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাই বঙ্গবন্ধু হত্যায় তাদের ভূমিকাও সক্রিয় নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে অন্য কোনো দলমতের লোক ছিল না। এটা একটা নজিরবিহীন ও আকস্মিক ঘটনা। মানুষ কখনো কল্পনা করেনি এমনটা হতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় দেখা গেছে ষড়যন্ত্র কতভাবে হতে পারে আর কীভাবে মানুষ জড়াতে পারে। তার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।