বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

শস্য শুকানোর নতুন কৌশল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর থেকে

শস্য শুকানোর নতুন কৌশল

যে কোনো আবহাওয়ায় পরিবেশবান্ধব দ্রুত সময়ে ভুট্টা, ধানসহ বিভিন্ন ফসল শুকানোর কৌশল ফ্লুডাইজড পদ্ধতি। এই মিশিনে ড্রায়িং করলে ফসলের রং ও পুষ্টি গুণাগুণ ভালো থাকে। ফসল নষ্টের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি  কৃষকরাও বাজারে বেশি মূল্য পাবে। কৃষক লাভবান হলে এ পদ্ধতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। বাংলাদেশে প্রথম শস্য শুকানোর এই ফ্লুডাইজড পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক। দিনাজপুর শহরের এক ওয়ার্কশপে এই মেশিনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ)-এর অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ চলছে। এই প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে আছেন প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার, কো-ইনভেস্টিগেটর হচ্ছেন ড. মো. মফিজুল ইসলাম ও মো. আবদুল মোমিন সেখ এবং রিসার্চ ফেলো হিসেবে মো. এজাদুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান ও হাসান তারেক। প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার জানান, মসলা জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে টুকিটাকি ফাস্ট স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক ছাড়া গ্রেইনের (ভুট্টা, ধান) জন্য আমাদের দেশে টু স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক নিয়ে কোথাও কাজ হয়েছে বলে জানা নেই। আমরাই প্রথম এই টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি। পরিবেশে ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি এর কোনো বিরূপ প্রভাব নেই। এটি তিন বছরের প্রকল্প। মাত্র এক বছরে এই পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছি। কমার্শিয়াল পর্যায়ে নিতে এক বছর লাগবে। এই পদ্ধতিতে প্রথম স্টেজে ভুট্টা বা ধান ফ্লুডাইজড বেড ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র ৪ মিনিটে ২৮% আর্দ্রতা থেকে ২০% আর্দ্রতায় নিয়ে আসা যায় এবং দ্বিতীয় স্টেজে এলএসইউ/সান ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টায় ২০% থেকে ১২% এ নিয়ে আসা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, কীভাবে কম খরচে এটিকে কৃষকদের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে পারি। মাঠ পর্যায়ে ভুট্টা শুকাতে বর্তমান কেজি প্রতি ৫০-১০০ পয়সা লাগে। চেষ্টা করছি এই খরচের মধ্যে রাখতে। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়, সেটি আর হবে না। প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার আরও জানান, বাংলাদেশে পোলট্রি ফিড, ডেইরি ফিড ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভুট্টার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে কৃষক  ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছে। কারণ একর প্রতি এর ফলন ও লাভও বেশি।

এদিকে, উদ্ভাবনী নতুন কৌশলটি দেখতে হাবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বিভিন্ন শাখার পরিচালকদের নিয়ে উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে যান। সেখানে উদ্ভাবিত যন্ত্রের বিভিন্ন দিক দেখেন এবং একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্রের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা দেখেন। এ সময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, এটি একটি নিড বেসড টেকনোলজি। বর্তমানে যেভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রতিবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে যে হারে ফসল নষ্ট হচ্ছে, তাতে আমার মনে হয়েছে এই টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর