সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাটোরের ঘটনায় চালক সহকারীসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের ঘটনায় চালক সহকারীসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা

নাটোরের লালপুরে বাসচাপায় লেগুনা যাত্রীসহ ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় লালপুর থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। বনপাড়া হাইওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইউছুব আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এদিকে গতকাল বগুড়া থেকে চ্যালেঞ্জার বাসের মালিক মঞ্জু সরকারকে পুলিশ আটক করেছে।

গত শনিবার বিকাল ৪টার দিকে নাটোরের লালপুরের কদিমচিলান ক্লিক মোড়ের সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে চ্যালেঞ্জার নামের একটি বেপরোয়া বাস বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী লেগুনার সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়। এতে লেগুনার ১৩ যাত্রীসহ ১৫ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে লেগুনার চালক ও তার সহকারীও রয়েছেন। লালপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় বনপাড়া হাইওয়ে থানার এএসআই ইউছুব আলী গতকাল সকালে লালপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় বনপাড়া লেগুনা স্ট্যান্ডের সভাপতি জাবেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, লেগুনার চালক, চালকের সহকারী, চ্যালেঞ্জার বাসের মালিক, বাসের চালক ও চালকের সহকারীকে আসামি করা হয়েছে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, আসামিদের  গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সকালে বনপাড়া পৌর চত্বরে সড়ক দুর্ঘটনারোধে জনসচেতনতামূলক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার পারভেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, হাইওয়ে পুলিশ সুপার (বগুড়া) মোস্তাফিজুর রহমান। বক্তারা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, তিনি মহাসড়কে লেগুনা ও তিন চাকার পরিবহন চলতে দিতে চান না। এখন থেকে এসব পরিবহন আর মহাসড়কে উঠতে পারবে না। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।

শোকের মাতম, লাশ দাফন : নিহতদের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। এদিকে উপজেলার শিবপুর গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী  শেফালী খাতুন ও রজুবা খাতুনের লাশের জানাজা গতকাল সকাল ১০ টায় গোপালপুর সেকেন সরকারের ধান চাতালে অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে রাজাপুর কেন্দ্রীয় গোরস্তানে তাদের দাফন করা হয়।

নিহতদের নাম : নিহতদের মধ্যে দুই শিশু, সাতজন পুরুষ ও ছয়জন নারী রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কমপক্ষে ২০ জন। লালপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম নজরুল নিহতদের মধ্যে ১২ জনের নাম জানিয়েছেন। তারা হলেন লেগুনার চালক ঠাকুরগাঁওয়ের রহিম আলী (২৮), নাটোরের বড়াইগ্রামের নারায়ণপুরের রজুফা বেগম (৫০), শেফালী বেগম (৪৫), জামাইদিঘার লগেনা বেগম (৬৫), পাবনার দাশুড়িয়া মিরকামারি গ্রামের শাপলা আক্তার (২০), শাপলার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১১ মাস), পাবনার পাকশির সোবহান আলী (৭৫), টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার রোকন শেখ (২২), পাবনার পাকশীর সোবহান (৫০) ও মূলাডুলি শ্মশানপাড়ার আদুরি বিশ্বাস (৩৫), তার মেয়ে স্বপ্না বিশ্বাস (দশ মাস) ও ছেলে প্রত্যয় বিশ্বাস (১২)। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা, আহতদের ১০ হাজার টাকা এবং বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি সামসুন নূর জানান, লেগুনাটির নিবন্ধন ও ফিটনেস ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করে।

বাস মালিক বগুড়ায় আটক : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গতকাল বেলা ১২টার দিকে পুলিশ বগুড়া শহরের মধ্য পালশা এলাকায় বাড়ি থেকে চ্যলেঞ্জার বাসের মালিক মঞ্জু সরকারকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়েছে। আটক মঞ্জু সরকার পুলিশকে জানান, তার বাসের চালক শামিমের বাড়ি শহরের মালগ্রামে এবং হেলপার কমলের বাড়ি সদরের গোকুল গ্রামে। মঞ্জু সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ বাস চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায়। কিন্তু তারা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি  একসময় বিআরটিসির মালিকানাধীন ছিল। কয়েক বছর আগে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এবং নিলামে উঠালে বগুড়ার মঞ্জু সরকার সেটি কিনে নেন। এরপর নতুন করে বডি লাগিয়ে এবং মেরামত করে  রুটপারমিট ও ফিটনেসবিহীন অবস্থায় বগুড়া-কুষ্টিয়া রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন। বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মফিজ উদ্দিন জানান, নিলামে কেনা বাস কোনো রুটে চলাচল করার সুযোগ নেই। পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পরই নিলাম দেওয়া হয়। নিলাম ক্রেতা বাসটি ভেঙে ওজন দরে বিক্রি করার কথা।

এদিকে শনিবার রাত থেকে বগুড়ার মহাসড়কে অভিযান শুরু হওয়ায় নতুন করে যানবাহন সংকট দেখা দিয়েছে। আটক হওয়ার ভয়ে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল কমে গেছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন ও ফিটনেসবিহীন সব ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। মহাসড়কে  ফিটনেসবিহীন যানবাহন ছাড়াও লেগুনা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভটভটি চলাচল বন্ধ করতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত  এ ধরনের ৫২টি যানবাহন আটক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর