সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
শুমারির কাজ শেষ পর্যায়ে

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১৩০

মোস্তফা কাজল

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১৩০

সুন্দরবনে বাঘ শুমারির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবারের গণনায় বাঘের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১৩০। তিন বছর আগের গণনায় এ সংখ্যা ছিল ১০৬। এবার বনের ৩৬ ভাগ এলাকায় ক্যামেরা ট্রাপিং করে বাঘ ও বাঘ শাবকের ছবি দেখে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার পায়ের ছাপ অর্থাৎ পাগমার্ক দেখে বাঘ গণনা করা হয়নি। বাঘের ছবি তুলে গোনা হয়েছে সংখ্যা। এ জন্য পূর্ব সুন্দরবন এলাকার প্রতি দুই কিলোমিটার পরপর বসানো হয় ক্যামেরা। এতে বেশ কিছু বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, বন বিভাগ আগামী অক্টোবরে বাঘের সংখ্যা বাড়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে। দু-এক দিনের মধ্যে বন অধিদফতর আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপ প্রতিবেদন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথভাবে চালানো প্রথম এই জরিপে মিলবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্য।

জানা গেছে, সুন্দরবনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন বনেও বাঘ খোঁজার তাগিদ দিচ্ছেন প্রাণী গবেষকরা। ২০১৫ সাল থেকে বনের খাল আর বাঘের বিচরণ ক্ষেত্রগুলো নজরদারি করছে বন বিভাগ। বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৭৫ সালে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে বাঘ জরিপ করেন জার্মান প্রাণী গবেষক হেন রিডসে। তখন সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের খবর জানা যায়। ২০০৪ সালে পাওয়া যায় ৪৪০টি বাঘ। কিন্তু দুই বছর আগে ২০১৬ সালে জানা যায় সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিমের ২৬ ভাগ এলাকায় বাঘ আছে ১০৬টি। সেবার কিছু ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও পায়ের ছাপ দেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এবার শুধু ট্র্যাপিং নির্ভর জরিপ হয়েছে। জাহিদুল কবির আরও জানান, পায়ের ছাপ থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিং বেশি নির্ভরশীল ও বিজ্ঞানসম্মত। তিনি জানান, বনের খাল, খাড়ি, ও বাঘ বিচরণ এলাকার মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের কাজ  শেষ হয়েছে। এখন ছবি দেখে গণনার কাজ চলছে। দুই বছর আগে প্রাপ্ত ১০৬টি বাঘের চেয়ে এবারের জরিপে সংখ্যা বেড়েছে।

 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ গবেষক মনিরুল এইচ খান বলেন, ৫০ বছর আগে রাজধানীর কাছে ভাওয়ালের বনে থাকা বাঘ হারিয়ে গেছে। কিন্তু পাহাড়ে বাঘ আছে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তাই সুন্দরবনের পাশাপশি পাহাড়ে বাঘ আছে কিনা- যাচাই করা উচিত। পৃথিবীতে একমাত্র নোনা পানি খেয়ে বেঁচে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। দুনিয়ার সব শ্বাসমূল বনের মধ্যে কেবল সুন্দরবনেই রয়েছে বাঘ। তিনি আরও বলেন, ভারত ও নেপালে বাঘের জীবন চিত্র আবিষ্কার সফল হয়েছে। যেহেতু ঢাকা চিড়িয়াখানা ও কক্সবাজার ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে চারটি সুন্দরবনের বাঘ আছে। এ ছাড়া দ্রুত জীবন রহস্য উদঘাটন না করতে পারলে বাঘের ভৌগোলিক মালিকানাও হারাতে পারে বাংলাদেশ। সুন্দরবনের লোনা পানির বাঘ রক্ষায় এশিয়া ও ইউরোপের দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে বাংলাদেশে। ইউএসএআইডি এবং বাংলাদেশ সরকারের ১১৪ কোটি টাকায় পরিচালিত হচ্ছে বাঘ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ থেকে  ২০২৮ সাল পর্যন্ত।

বন বিভাগের তথ্য আনুযায়ী, গত ১৮ বছরে ৫০টি বাঘ মারা গেছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, বাঘ গবেষক, ড. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নজরদারি করা উচিত। এসবের পাশাপাশি বাঘ হত্যায় বনদস্যুদের দায় শতভাগ। চোরাকারবারিদের চাহিদা অনুযায়ী বনের গভীরে বাঘ হত্যা করে তারা। 

সর্বশেষ খবর