মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষক ভয়ঙ্কর

মির্জা মেহেদী তমাল

শিক্ষক ভয়ঙ্কর

মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সীমা বিশ্বাস অন্যদিনের মতোই প্রাইভেট পড়ার জন্য সকালে মাদ্রাসাশিক্ষক আবদুল আলিমের বাড়িতে যায়। কিন্তু মেয়েটি দুপুরের পরও বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজা শুরু করেন। সীমার বাবা স্থানীয় গ্রামপুলিশ সুবাস বিশ্বাস আবদুল আলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মেয়ে প্রাইভেট পড়ে ফিরে গেছে বলে জানান।

এদিকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ভারতের হাওড়া জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট অনামিকা দলপতি সুবাস বিশ্বাসের মোবাইলে ফোন করে সীমাকে হাওড়া স্টেশনে পাওয়ার খবর জানান। হাওড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমাকে উদ্ধারের পর স্থানীয় এসএমএন নামে একটি শেল্টার হোমের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সীমা সেখানেই অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

সীমার বাবা সুবাস বিশ্বাস জানান, সীমা ঘটনার দিন প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর মাদ্রাসা মাস্টার আবদুল আলিম তাকে মাগুরা শহরে নিয়ে যান। এ সময় তাদের সঙ্গে আরও দুটি ছেলে ছিল। তারা মাগুরা শহরের একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে পানির সঙ্গে কিছু খাওয়ানোর পর সীমা অচেতন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় পর চেতনা ফিরে এলে সে নিজেকে হাওড়া স্টেশনে দেখতে পায়। এ সময় বিপ্লব নামে এক যুবকসহ দুজন তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সীমা চিৎকার দিলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সীমার বাবা সুবাস বিশ্বাস হাওড়া প্রশাসনের ওই ম্যাজিস্ট্রেট ও সীমার কাছ থেকে এসব কথা জানতে পেরেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে শালিখা থানার পুলিশ জানায়, হাওড়া প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট অনামিকা দলপতির সঙ্গে কথা বলে সীমাকে উদ্ধারের বিষয়টি জানা গেছে। তাদের প্রাথমিক বক্তব্য এবং মেয়েটির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসাশিক্ষক আবদুল আলিমকে গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে সামির (৮) নামে অপহৃত এক শিশুকে উদ্ধার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সামির হাতিরঝিল এলাকার কাওসার আহমেদের ছেলে। এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকা এক ব্যক্তিকেও আটক করে র‌্যাব। তার নাম মো. মইনুল ইসলাম। পেশায় তিনি একজন মাদ্রাসাশিক্ষক। তিনি নোয়াখালীতে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। র‌্যাব জানিয়েছে, তিনি রাজধানীর হাতিরঝিলসংলগ্ন মধুবাগ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। এ এলাকায় তিনি কখনো লজিংয়ে থাকতেন আবার কখনো প্রাইভেট পড়াতেন। সেই সুবাদেই অপহৃত সামিরের বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। র‌্যাব-৩-এর অপারেশন কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ২৩ আগস্ট সামিরকে বেড়ানোর নাম করে বাসা থেকে নিয়ে যান মইনুল ইসলাম। এর পর থেকে সামিরের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মইনুলের ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সামিরের বাবা কাওসার আহমেদের মাইক্রোবাস থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে সামিরের মা মুক্তি বেগম সম্পর্কে আজেবাজে কথা লেখা ছিল। র‌্যাব সদস্যরা মনে করছেন, পরিবারকে বিভ্রান্ত করতেই ওইসব কথা লেখা হয়েছিল। এ ছাড়া চিরকুটে সামিরকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে— লেখা ছিল। সেই টাকা অন্য কেউ নিয়ে এলে চলবে না। টাকা নিয়ে আসতে হবে মা মুক্তিকে। একটি ফোন নম্বর লেখা ছিল ওই চিরকুটে। র‌্যাব জানায়, পরদিন শুক্রবার সকালে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সামিরের মা মুক্তিকে টাকা নিয়ে হাজীক্যাম্প এলাকায় যেতে বলেন মইনুল। তখন সামিরের পরিবার র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব মাঠে নামে। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে মইনুলের অবস্থান জানতে পেরে র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে ঘিরে থাকেন বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা। পরে মুক্তি বেগম টাকা নিয়ে বিমানবন্দর রেললাইনের ওপর থেকে ফোন করলে মইনুল এগিয়ে যান টাকা নিতে। ছেলেকে দিয়ে টাকা হাতে নেওয়ার সময় তাকে ধরে ফেলেন র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাব-৩-এর অপারেশন কমান্ডার রবিউল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে টাকার লোভেই শিশু সামিরকে অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণকারীকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ঘটনার আসল রহস্য বের হবে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তানকে কার কাছে পাঠানো হচ্ছে, তা অবশ্যই আগে অভিভাবকদের জানতে হবে। খোঁজখবর নিয়েই সন্তানদের পাঠানো উচিত শিক্ষকের কাছে। খোঁজখবর না নিয়ে সন্তানকে পড়তে পাঠানোয় চরম খেসারত দিতে হলো সীমার পরিবারকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর