শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইভিএম নিয়ে তোলপাড়

বিএনপি মনে করে ভোট ষড়যন্ত্রের অংশ

মাহমুদ আজহার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করার প্রস্তাবের পেছনে ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। তারা একে ভোট ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে। বিএনপি ইভিএমকে দেখছে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার ‘নীলনকশা’ এবং ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ হিসেবে। বিএনপি নেতাদের মতে, এ সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, জুলুম, নির্যাতনের কারণে দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সংসদ নির্বাচনে তারা জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। এ জন্যই ইভিএমের সাহায্য নিচ্ছে। যখন উন্নত বিশ্ব ইভিএম থেকে সরে আসছে, তখন আমাদের নির্বাচন কমিশনকেও এ থেকে সরে আসতে হবে। স্বয়ংক্রিয় এই ভোটে জালিয়াতির শঙ্কার পাশাপাশি এর কারিগরি বিষয়ে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সমস্যায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা দলটির। ইভিএম চালু করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে নতুন এক নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সারা বিশ্ব যখন ইভিএম ব্যবহার থেকে দূরে সরে আসছে, তখন সরকার ইসিকে দিয়ে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। এটা আওয়ামী লীগকে জেতানোর গভীর ষড়যন্ত্র। বিএনপি এই ইভিএম পদ্ধতি মানে না। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভোট দিতে হবে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সরকার বা নির্বাচন কমিশন যে ইভিএমের কথা বলছে, এর ব্যবহার ভোটারদের জানা নেই। এমনকি যারা ভোটগ্রহণ করবেন তাদের অনেকেই এ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নন। তারা বলেন, এর পেছনে মতলববাজি ও দুরভিসন্ধি রয়েছে। নির্বাচনের আর মাত্র বাকি চার মাস। এই কম সময়ের মধ্যে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপি সন্দেহ করছে। মানুষ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বুঝতে পেরে যন্ত্র দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সরকার। জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার হয়। ২০১২ সালে বিদায়ের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএমের প্রস্তুতিও রেখে গিয়েছিল ড. এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন। কাজী রকিব কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু রাজশাহী ও রংপুর সিটিতে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। বর্তমান এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সদ্য সমাপ্ত কয়েকটি সিটি করপোরেশনে দু-একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, একজন ভোটার ইচ্ছা করলে একচাপে ৫০টির মতো ভোট দিতে পারবেন। যারা ইভিএম ভোটিং পদ্ধতির ডিজাইন করবেন, তারা এমনভাবে ডিজাইন করতে পারবেন যার ফলে ভোটার যে প্রতীকেই ভোট দিক, তা একটি নির্ধারিত প্রতীকের ঘরে যোগ হবে। তাছাড়া মোবাইল ফোন সেটের ব্লু টুথের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে ভোটিং মেশিন কন্ট্রোল করা যাবে। যা কখনই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাম্য নয়।’ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আশঙ্কা ইভিএম চালুর মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির মহোৎসব করতে চায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমা বিশ্বসহ উন্নত দেশগুলো যখন ভোটগ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি থেকে সরে আসছে তখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ পদ্ধতি চালুর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সর্বশেষ খবর