শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভালো ব্যবস্থাপনার নজির ভুটানে

শিমুল মাহমুদ, পুনাখা (ভুটান) থেকে

ভালো ব্যবস্থাপনার নজির ভুটানে

ভুটান হচ্ছে আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমানোর দেশ। সবুজ পাহাড় পরিবেষ্টিত বর্ণীল ভূখণ্ডের মায়ায় আচ্ছন্ন হওয়ার দেশ। প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বলে খ্যাত ভুটানের পরিবেশ এতই নিরিবিলি ও সুনসান যে, পাহাড়ের পাদদেশে নদীর সে াতধারার কলকল ধ্বনি খুব বেশি স্পষ্ট শোনা যায়। ছবির চেয়েও সুন্দর পরিপাটি একটি ছোট্ট দেশ ভুটান সারা দেশে ভালো ব্যবস্থাপনার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। মানুষ আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ফলে ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন একটি দেশের জন্য সরকারকে তেমন কিছুই করতে হচ্ছে না। গত ছয় দিনে দেশটির রাজধানী থিম্পুসহ কয়েকটি শহরে ঘুরে একবারের জন্যও গাড়ির হর্ন শোনা গেল না। দেখা যায়নি কোনো যানজট। অথচ রাস্তায় গাড়ির কোনো কমতি নেই। বিশ্বের প্রায় সব দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি চলাচল করছে ভুটানের রাস্তায়। শহরগুলোর ফুটপাথে একটিও দোকান বা বাড়তি কোনো স্থাপনা চোখে পড়েনি। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যা কিছু ক্ষতিকর তার সব কিছুই নিপুণ দক্ষতায় প্রতিরোধ করা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থাপনা, নিষ্ঠা ও নিয়মানুবর্তিতা যদি বাংলাদেশের থাকত তাহলে আমরাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারতাম অনেক ক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত সততা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার কারণেই খুব বেশি প্রাচুর্য না থাকলেও ভুটানের মানুষের জীবন যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যের কমতি নেই। এ জন্যই হয়তো তারা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ। প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সব নেতিবাচক দৃষ্টান্ত পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ভুটান। ছোট অর্থনীতির দেশ হলেও ভুটানকে অনেক ক্ষেত্রেই অনুসরণ করার আছে। 

ভুটান আমাদের খুব কাছের দেশ হলেও সংস্কৃতির দিক থেকে একেবারেই আলাদা। মানুষগুলো অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির। অনেক বেশি বিনয়ী। তাদের মধ্যে কোনো ছলচাতুরি, শঠতা, প্রতারণার দৃষ্টান্ত নেই। তারা দেশের আইনকে সব সময় মান্য করে চলে। ভুটানের স্কুল, অফিস, মন্দিরে ট্র্যাডিশনাল পোশাক বাধ্যতামূলক। এই ব্যাপারটা ভুটানকে অনেক বেশি রঙিন করে তুলেছে। মাত্র আট লাখ মানুষের দেশ ভুটান অত্যন্ত নিরিবিলি, এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে দূরের গ্রামগুলোকে দেখে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় মনে হয়েছে। ভুটানের মুদ্রার নাম গুলট্রাম। বিনিময়মূল্য ভারতীয় রুপির সমান। জিনিসপত্রের দাম আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। অধিকাংশ জিনিস ভারত ও চীন থেকে আমদানি করতে হয় বলে দামটা একটু বেশি। তাই শপিংয়ের জন্য ভুটান আদর্শ কোনো জায়গা নয়।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর অভয়ারণ্য : ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক উত্কৃষ্ট অভয়ারণ্য। এখানে হাজারও দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। ভুটানের বনাঞ্চল এলাকা প্রায় ৭০ ভাগ। বনাঞ্চল ছাড়াও লোকালয়ে, সড়কে-মহাসড়কে অবাধে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য কুকুর, গরু ও ঘোড়া। ধর্মপ্রাণ ভুটানিদের প্রাণীর প্রতি রয়েছে আলাদা মমতা। রাজধানী থিম্পুসহ বিভিন্ন নগরীর সর্বত্রই কুকুরের অবাধ বিচরণ। তারা পর্যটকদের কোনো উপদ্রব না করলেও অনেক পর্যটন কুকুরের এই দলগত বিচরণ পছন্দ করেন না। অন্যদিকে সর্বত্রই কোনো বাঁধন ছাড়াই খোলা অবস্থায় ঘুরে বেড়ায় গরুর পাল। এসব প্রাণীর ব্যাপারে ভুটানিরা খুব সহনশীল।

বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি ভুটানের : ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ভুটানই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী রাষ্ট্র। এক সময় ভুটানের গিরিপথ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও তিব্বতের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। বতর্মানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কিংবা আসাম পার হয়েই ভুটান আসতে হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নাগরিকদের জন্য ভুটান ভ্রমণ কঠিন হলেও বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশের নাগরিকরা সহজে ভুটান আসতে পারেন। বর্তমানে ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশের কয়েক শ পর্যটক ভুটানের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভুটানের পর্যটন এলাকার হোটেলগুলোতে এখন বাংলাদেশি পর্যটকদের দারুন ভিড়।

সর্বশেষ খবর