শিরোনাম
রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাগ্য বদলায়নি গৃহশ্রমিকের

জিন্নাতুন নূর

ভাগ্য বদলায়নি গৃহশ্রমিকের

দারিদ্র্য, খাদ্যের জোগান ও পরিবারের ঋণ শোধ করতে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় গৃহশ্রমের কাজে ঢুকছে বহু কন্যাশিশু ও নারী। দুই বেলা দুই মুঠো খাবার আর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের আশায় গৃহশ্রমিকের কাজ করছে তারা। কপাল বদলাবে এ আশায় বাসাবাড়ির কাজে ঢুকলেও কর্মস্থলে তাদের বিশেষ করে শিশু ও তরুণীদের শিকার হতে হচ্ছে নির্যাতনের। এদিকে ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ভারী কাজ করেও গৃহশ্রমিকরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ ও ছুটি। কি শিশু, কি নারী— গৃহশ্রমে তাদের ভাগ্য বদলায়নি। অধিকাংশই কাটাচ্ছে কষ্টের জীবন। এর ফলে তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, দেশে এখন মোট গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২৫ লাখ। এর ৯০ শতাংশই নারী। যদিও সরকারি তথ্যে শিশু গৃহশ্রমিকদের কথা উল্লেখ থাকে না। ‘শৈশব বাংলাদেশ’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে দেশে ৩ লাখ শিশু গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে আবার ৮০ শতাংশই কন্যাশিশু। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকের অর্ধেকই ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী কন্যাশিশু। আর ২৭ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছর। আবার ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদেরও কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। আর গৃহশ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট ন্যূনতম বেতন কাঠামোও ঠিক করা নেই। তবে বিলসের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, শহর এলাকায় একজন গৃহশ্রমিকের গড়ে ন্যূনতম মাসিক বেতন ৫০০ টাকার কিছু বেশি হয়। আবার গ্রামে গৃহশ্রমিকরা কখনো কখনো খাবার ও পোশাকের বিনিময়েও কাজ করে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে, ৪০ শতাংশ শ্রমিক নিয়মিত তাদের মাসিক বেতনও পায় না। অথচ গড়ে একজন গৃহশ্রমিক প্রতিদিন প্রায় ১১ ঘণ্টা কাজ করে। আর ঢাকার শিশু গৃহশ্রমিকরা গড়ে সাড়ে ১৫ ঘণ্টাও কাজ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ করতে গিয়ে গৃহশ্রমিকদের ভারী পাত্রে ফুটন্ত পানি বহন, রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি তোলা, কাপড় ইস্তিরি করার মতো ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। এগুলো করতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। অনেককে ঘরে তালা মেরে গৃহকর্ত্রী বাইরে যান। ৩৩ শতাংশ গৃহশ্রমিক অসুস্থতায় ওষুধ সেবন করার সুযোগ পায়। আর মাত্র ৭ শতাংশ শ্রমিককে চিকিৎসকের কাছে বা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিবেদনমতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গৃহশ্রমিকরা ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেও এই শ্রমিকদের অনেকে যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। বিলসের গবেষণা থেকে জানা যায়, ৫৩ শতাংশ গৃহশ্রমিকই সকল প্রকার বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বঞ্চিত। ৮৩ শতাংশই নিয়মিত নিয়োগকর্তার বকা খায়, ৪৭ শতাংশকেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং চাকরিচ্যুত করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। ৬৩ শতাংশকেই তাদের শারীরিক সক্ষমতার চাইতেও বেশি ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। ১৭ শতাংশকে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকে। বিলসের হিসাবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে ৯৭৫ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর এর মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। এর ৬০ শতাংশই শিশু। এ ছাড়া গত এক যুগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় শ গৃহশ্রমিকের।

সর্বশেষ খবর