শিরোনাম
রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশীয় জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহন বাধ্যতামূলক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সমুদ্রপথে ৫০ শতাংশ পণ্য দেশীয় জাহাজে পরিবহন করতে হবে। প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ (সংরক্ষণ) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ায় এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের জাহাজশিল্পকে প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে বিষয়টি এ আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৮২ সালে প্রণীত অধ্যাদেশে ৪০ শতাংশ পণ্য দেশীয় জাহাজে পরিবহনের বিধান থাকলেও তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। ফলে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন বাবদ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বিদেশি জাহাজ মালিকদের পকেটে। সূত্র জানায়, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ শতাংশই হয় সমুদ্রপথে। তবে শর্ত মেনে শিপিং এজেন্টরা দেশীয় জাহাজ ব্যবহার না করায় জাহাজ ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলোর পকেটে চলে যাচ্ছে। দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে ও দেশি জাহাজ ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে ৫০ শতাংশ পণ্য দেশীয় জাহাজে পরিবহন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের সুবিধার জন্য সরকার ১৯৮২ সালে অধ্যাদেশ জারি করে। এতে আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের শর্ত রয়েছে। বার্থিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশীয় জাহাজকে সুবিধা দেওয়ার কথা আইনটিতে বলা হলেও কার্যত তার বাস্তবায়ন নেই। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেশীয় জাহাজগুলো পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় জাহাজ মালিকদের অনুরোধে ‘বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ (সংরক্ষণ) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ায় ৬০ শতাংশ পণ্য দেশীয় জাহাজে পরিবহনের শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপত্তি আসে। তারা জানায়, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে শর্ত যুক্ত করে দিলে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনে দেশীয় জাহাজগুলোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে বলেও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শেষে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে গত ২ আগস্ট আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ওই সভায় খসড়া আইনের ধারা ৩(১)-এ উল্লিখিত ‘অন্যূন ৬০ শতাংশ’-এর পরিবর্তে ‘ অন্যূন ৫০ শতাংশ’ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশীয় জাহাজশিল্পকে উৎসাহিত করতে আমরা সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ৫০ শতাংশ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি প্রস্তাবিত জাহাজ সংরক্ষণ আইনের খসড়ায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’ জাহাজশিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে জাহাজ ব্যবসাকে সরকার শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দেশি ও আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজশিল্পে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজি বিনিয়োগ করে। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিপিং ব্যবসায়ীরা নিজের দেশ থেকে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পান বাংলাদেশে তা নেই বললেই চলে। ফলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে দেশীয় জাহাজশিল্প। কমতে থাকে দেশীয় জাহাজের সংখ্যা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ছিল ৬৩, যা পরের অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৪৭-এ। গত বছরের শেষের দিকে তা আরও কমে নেমে আসে ৩৮-এ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর