সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইন্দোনেশিয়ায় লাশের সারি

সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৮০০

প্রতিদিন ডেস্ক

ইন্দোনেশিয়ায় লাশের সারি

ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে মৃত মানুষের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৮৫০। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পালু শহরসহ আশপাশের অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল শুধু লাশ আর লাশ। এ লাশ ভাসছিল সমুদ্রের পানিতে, উপকূলে এবং রাস্তার পাশে ঢেকে রাখা ছিল সারি সারি লাশ। অদূরেই ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে ভেসে আসছিল মানুষের কান্না আর আর্তনাদ। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক  ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট প্রায় ২০ ফুট উঁচু ঢেউ পালু শহরকে ভাসিয়ে দেয়। ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে হাজারও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুত্ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে। ভূমিধসে শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খোলা আকাশের নিচে রয়েছে লোকজন। বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপের ভিতর অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিত মানুষদের সন্ধান করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের বাইরে তাঁবু গেড়ে আহত লোকজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠন রেডক্রস বলছে, ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত খুব সামান্যই জানা গেছে। এমনও দুর্গত অঞ্চল রয়েছে, যেখানে এখনো পৌঁছানোই যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়েছে, সুলাবেসি দ্বীপের প্রাদেশিক রাজধানী পালু শহরে ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের পর সেখানকার চিত্র ভয়াবহ। উপকূলীয় এলাকায় আংশিকভাবে ঢাকা পড়া মৃতদেহ পড়ে আছে। ছাদ, কাঠসহ বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে বেঁচে যাওয়াদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে, ছোট একটি শিশুর মাটিমাখা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছেন। নাইনিং নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সাগরতীরে অনেক মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং সাগরপৃষ্ঠেও মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে।’ পালু শহরের তথ্য সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পেজ এখন নিখোঁজদের তথ্য জানানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে। স্বজনরা নিখোঁজ সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানীর ছবি পোস্ট করে তাদের সন্ধান চাইছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা : ভূমিকম্পের সময় মেরুদণ্ডে ও ঘাড়ে আঘাত পেয়েছেন ডোয়ি হারিস। পালুর আর্মি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। ভূমিকম্পের পর আফটারশক চলতে থাকায় রোগীদের হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভূমিকম্পের সময়কার কথা বলতে গিয়ে হারিসের দুই চোখ কান্নায় ভরে ওঠে। তিনি জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি স্ত্রী ও মেয়েসহ হোটেলের ছয় তলার একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। হারিস বলেন, ‘নিজেদের বাঁচানোর জন্য আমাদের হাতে কোনো সময় ছিল না। আমি মনে হয় একটি দেয়ালের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছিলাম।’ হারিস জানান, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তার পরিবার পালু শহরে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনতে পেলাম আমার স্ত্রী বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে, কিন্তু পরে নীরব হয়ে গেল। আমি জানি না ও আর আমার সন্তান কেমন আছে। আশা করি তারা নিরাপদ আছে।’ নগরীর রোয়া-রোয়া হোটেলের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন ২৪ জন। হোটেলের মালিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে গতকাল জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে কান্নার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্ধারকারীরা নিজেদের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেই উপজীব্য করেছেন জীবন বাঁচানোর। হাত দিয়ে তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ওই ২৪ জনকে উদ্ধারের প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পালুর আরেক বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী আনসার বাচমিদ ভূমিকম্পের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম এবং ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। এখানকার মানুষের খাদ্য, পানীয়, বিশুদ্ধ পানিসহ সহায়তার প্রয়োজন।’ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক শহর ডংগালা নিয়ে উদ্ধারকারীদের মধ্যে আলাদা করে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। সহায়তা সংস্থা ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস-এর ইন্দোনেশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার ইয়েনি সুরিজানি বলেন, সড়কপথ কিংবা আকাশপথ কোনোভাবেই ডংগালায়  পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সমুদ্রপথে সহায়তা নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের ইন্দোনেশিয়া প্রধান জ্যান গেলফান্ড মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘শুধু বড় বড় শহরের বাসিন্দাদের বিষয় নয় এটি। দুর্গম এলাকায়ও অনেক মানুষ বাস করে, যাদের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন।’

জেল ভেঙে পলায়ন : ভূমিকম্পে পালু কারাগারের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়ার পর ৫৬০ জন কারাবন্দীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনতারা। এর পাশাপাশি দংগাল কারাগার থেকেও শতাধিক বন্দী পালিয়ে গেছে।

 

সর্বশেষ খবর