শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাহিত্যকর্ম বিশ্বায়নের তাগিদ

হুমায়ূন মেলা নিউইয়র্কে

প্রতিদিন ডেস্ক

সাহিত্যকর্ম বিশ্বায়নের তাগিদ

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম বিশ্বায়নের জন্য তার লেখা ইংরেজিসহ অধিক মানুষের পাঠোপযোগী ভাষায় অনুবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে নিউইয়র্কে গত রবিবার ‘হুমায়ূন মেলা’য়। এ লক্ষ্য অর্জনের পথে সামনের বছর নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক হুমায়ূন সম্মেলন’ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল। নিউইয়র্ক তথা আমেরিকায় সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ এবং মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ও হোস্ট ‘শো-টাইম মিউজিক’র আলমগীর খান আলম একান্ত সহযোগী হয়ে পাশে থাকার কথা বললেন। এনআরবি নিউজ

নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন কুইন্স প্যালেস মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের মতো দুই দিনের এই ‘হুমায়ূন মেলা’র মধ্যমণি ছিলেন হুমায়ূনপত্নী অভিনেত্রী-নাট্যকার মেহের আফরোজ শাওন। বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে হুমায়ূনের লেখা, জীবনাচার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, স্মৃতিচারণ করেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান ও কবি মাহবুব হাসান সালেহ, একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদউল্লাহ, কথাসাহিত্যিক সিনহা মনসুর, আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি, প্রকৌশলী আবু হানিপ, মো. শাহনেওয়াজ প্রমুখ। এ উপলক্ষে হুমায়ূনের বইয়েরও একটি প্রদর্শনী হয় মেলা প্রাঙ্গণে। বাঙালি খাদ্য এবং পণ্যেরও স্টল ছিল মেলার প্রবেশপথে। রবিবার দুপুরে বেলুন উড়িয়ে বিপুল করতালির মধ্যে মেলার সূচনা হয়। হুমায়ূনের জাদুকরী আমেজে প্রবাসীরাও একাকার হয়েছিলেন। জীবনের শেষ বছরটি হুমায়ূনের কেটেছে এই নিউইয়র্ক সিটির হাসপাতালে। এর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ কয় বছর কাটিয়েছেন এই আমেরিকায়। আর এভাবেই হুমায়ূনের প্রতি প্রবাসীদের বিশেষ এক মমত্ববোধ সদা জাগ্রত রয়েছে। সে চেতনাকে সমুন্নত রাখতে গত বছর থেকে হুমায়ূন মেলার আয়োজন করছেন আলমগীর খান আলম। জীবিতাবস্থায় হুমায়ূনকে নিয়ে সর্বপ্রথম ‘হুমায়ূন মেলা’ করেছিলেন মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা। মেলার চেতনায় হুমায়ূনের প্রিয় গান পরিবেশন করেন মেহের আফরোজ শাওন, এস আই টুটুল, সায়রা রেজা, রানু নেওয়াজ, কৃষ্ণাতিথি, শাহ মাহবুব, কামরুজ্জামান বকুল, চন্দন চৌধুরী এবং সেলিম ইব্রাহিম। এ মেলার মিডিয়া পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সাংবাদিক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় হুমায়ূন স্মরণে মূল আলোচনায় কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, মূলধারার সাহিত্যের সঙ্গে যদি হুমায়ূন সাহিত্যের যোগসূত্র ঘটাতে পারি, পরিচয় করিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় সেটি অনেক অর্থবহ হবে। হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, যাদের জন্ম এই আমেরিকায়, যারা বেড়ে উঠছে আমেরিকায়, তাদের পরিচয় হয়তো এখনো ঘটেনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও শিল্পকর্মের সঙ্গে। তারা হয়তো এমনি নামে চেনেন। হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব মা-বাবার। আশা করব, প্রবাসের অভিভাবকরা পারিবারিকভাবে সে চেষ্টা করবেন। বাংলা ভাষার সব কিংবদন্তি সাহিত্যিকের সঙ্গেই প্রবাস প্রজন্মকে পরিচিত রাখতে হবে। আর এভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা সাহিত্য আরও উজ্জ্বলভাবে উদ্ভাসিত হবে। কূটনীতিক ও কবি মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, আন্তর্জাতিক হুমায়ূন সম্মেলনে শুধু বাঙালিদের জড়ো করলে হবে না, আমেরিকানসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনকে আনতে হবে। এটি একজন কূটনীতিক হিসেবে নয়, বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে উল্লেখ করলাম। তাহলেই হুমায়ূনের যে সাহিত্যবোধ, তার মধ্য দিয়ে বাঙালির সাহিত্য সম্ভারের বিশ্বায়ন সম্ভব হবে। হুমায়ূন চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের ভীষণ প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমে ইংরেজি এবং পরে অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। কারণ, প্রবাসে বড় একটি প্রজন্ম, যারা বাংলায় কথা বলতে পারলেও পড়তে পারেন না। এদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আর আমি রাস্তার এপাড়-ওপাড়ের বাসায় ছিলাম। কখনো কথা হয়নি। তেমনভাবে মেলামেশাও করিনি। তবে শেষের দিকে, তার সঙ্গে আমার এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে যে, আমার জীবন থেকে কখনো হুমায়ূন হারিয়ে যাবেন না। কারণ, যে হুমায়ূনকে আমরা জেনেছি, যে হুমায়ূনকে মানুষ ভালোবেসেছে, সেই হুমায়ূনের বাইরে আরেকটি হুমায়ূন রয়েছে।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম শেষ সময়ে হাসপাতালে হুমায়ূনের স্মৃতিচারণকালে বলেন, মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছেন। সে সময়েও তার মধ্যে রসবোধ পুরোপুরি ছিল। প্রকাশক মাজহারের মাথায় চুলের কমতি ছিল। সেদিকে দৃষ্টিপাত করে হুমায়ূন বললেন, কেমো নেওয়ার পরও আমার মাথায় চুল ঘনই রয়েছে। তাই আমি মাজহারকে বলতে চাই কেমো নিতে। তাহলে তার মাথায়ও চুল গজাবে। এভাবেই তিনি মানুষকে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, হুমায়ূনের ২-৩টি বই ইংরেজিতে অনুবাদ হচ্ছে। এটি খুবই খুশির সংবাদ। আরেকটি বিষয়ে আহ্বান রাখতে চাই, সামনের বছর তিন দিনের যে সম্মেলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটির প্রস্তুতি যেন আগে থেকেই শুরু করা হয়। সেখানে যেন প্রবাসের প্রজন্মকে একটি সেমিনারে সম্পৃক্ত করা হয়। তাহলেই হুমায়ূন সাহিত্য আন্তর্জাতিককরণের পথ সুগম হবে। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নঈম নিজাম বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকার পূজা সংখ্যায় টানা নয়বার হুমায়ূনের লেখা ছাপা হয়েছিল। অর্থাৎ হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মতো ভারতেও ছিল। পশ্চিমবঙ্গেও তার জনপ্রিয়তা সমান্তরালভাবে ছিল। হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো যদি প্রকাশকরা আগের মতোই আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকাশ করতে থাকেন, তাহলে নতুন প্রজন্ম বই পড়তে আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের প্রজন্মের বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে হুমায়ূনের অবদান অনস্বীকার্য-উল্লেখ করে নঈম নিজাম বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির অ্যামহার্স্টে পড়ছে। সে স্কলাস্টিকার ছাত্রী ছিল। বই পড়তে তেমন আগ্রহী ছিল না। কিন্তু হুমায়ূনের একটি বই পড়ার পর প্রত্যেক একুশে বইমেলা থেকে হুমায়ূনের সবগুলো বই ক্রয় করতে হয়েছে তার জন্য। প্রকৌশলী আবু হানিপ বলেন, ‘হুমায়ূন মেলা প্রতি বছরই করতে হবে বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত রূপ প্রবাস প্রজন্মে যথাযথভাবে উপস্থাপনের স্বার্থে’। মেলায় বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, জেবিবিএর নেতা হারুন ভূইয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা হাজী এনাম এবং ফরিদ আলম, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সালাম ভূইয়া, লেখিকা বিদিতা রহমান, কমিউনিটি লিডার ফাহাদ সোলায়মান, মাকসুদ এইচ চৌধুরী, আবদুল কাদের চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর