শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিসর্জনে শেষ দুর্গোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিসর্জনে শেষ দুর্গোৎসব

আসছে বছর আবার হবে। সজল চোখে দেবীকে বিদায় দিয়ে শুভ আগামীর বার্তা পায় ভক্তরা। গতকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন করা হয়। এরপর দেবী দুর্গার পায়ে সিঁদুর ছুঁইয়ে নেন সধবা সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। সারা বছর নিজের সিঁথির সিঁদূর সুরক্ষিত রাখতে দেবী মার আশীর্বাদ প্রার্থরা করেন তারা। এরপর চলে সিঁদুর খেলার ধুম। পরিচিত-অপরিচিতর বন্ধন ভুলে সর্বজনীন উৎসব পূর্ণতা পায় সিঁদুর খেলায়। রঙের হুল্লোড়ে ভাসিয়ে বিদায় নেন দেবী দুর্গা। পূজা শেষে মহিষাসুর মোর্দিনী দেবী দুর্গার আশীর্বাদে সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে যেতে পরিবারের সবাই ধারণ করেন অপরাজিতা। বিকাল ৪টা থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজঘাটের বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির নেতৃত্বে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিজয়া দশমীর সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার দর্পণ বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের উদ্দেশ্যে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রতিমা পলাশীর মোড়ে আসে। কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রায় যোগ দিতে ঢাকার বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ  থেকে শোভাযাত্রাগুলো পলাশী মোড়ে এসে জড়ো হয়। এরপর গান-ঢাকের তালে তালে নাচতে থাকেন সবাই। বেলা ৩টায় শোভাযাত্রা সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখান থেকে প্রতিমা নিয়ে ট্রাকে করে ঢাকের তালের পাশাপাশি ‘দুর্গা মা-ই কি, জয়’ স্লোগান দিতে দিতে ঘাটের দিকে এগিয়ে যান বিভিন্ন বয়সী মানুষ। প্রতিমা বহনকারী ট্রাকগুলো বিকাল ৪টার মধ্যেই সদরঘাটে এসে জমা হয়। এরপর ট্রাক থেকে একে একে ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। প্রতিমা বিসর্জনের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চারদিকে পানি ছিটিয়ে এবং আরও কিছু নিয়ম মেনে কাঁধে করে  প্রতিমা নৌকায় তোলা হয়। নৌকায় করে প্রতিমা মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের সময় ঘাটে দাঁড়ানো হাজারও ভক্ত দেবী দুর্গার উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে নানা ধ্বনি দিতে থাকেন। প্রতিমা বিসর্জনের কেন্দ্রীয় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মূলত সকালেই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। বিকালে শুধু আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রাসহকারে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, কেন্দ্রীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে বিজয়া দশমী উপলক্ষে সকাল ৯টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। এরপর পূজা শেষে বিকাল ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পক্ষ থেকে বিজয়া দশমীর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শাস্ত্রমতে, এবার দেবী দুর্গা ঘোড়ায় এসেছিলেন এবং দোলায় মর্ত্য ত্যাগ করেন। মূলত দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা গত বারের তুলনায় ১১৯৫টি বেশি। এর মধ্যে রাজধানীতে ছিল ২৩৪টি মণ্ডপ।

কক্সবাজারে অর্ধশত প্রতিমা : অর্ধশত প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। পূজারি, ভক্ত, দর্শনার্থী, পর্যটকসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয়। লাখো মানুষের অসাম্প্রদায়িক মিলনোৎসব হয় কক্সবাজার সৈকতে। ঢাক, ঢোল, কাঁসরের তালে আরতির বাদ্য বাজনায় ‘মা দুর্গার জয়’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সাগরতট। বিসর্জন মন্ত্রের পাঠের মাধ্যমে অর্ধশত প্রতিমা সাগরে নিরঞ্জন করেন ভক্ত-পূজারিরা। বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জাতীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, পুলিশ সুপার (ট্যুরিস্ট) জিল্লুর রহমান,  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিৎ দাশের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা।

বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন : এ ছাড়া আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, এদিন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে, খুলনার ভৈরব নদে, রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড়ে, চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে, দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর সাধুর ঘাটে, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদে, নোয়াখালীতে বিভিন্ন দিঘী ও নদীতে, লক্ষ্মীপুরে শ্মশানঘাটের পাশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর