কক্সবাজারের জিন্নাত আলী শুধু দেশের নয়, বিশ্বেরও দীর্ঘদেহী মানুষ। আলোচনায় সেভাবে না আসায় এ রেকর্ড আজও তার ঘরে পৌঁছায়নি। শারীরিক দুর্বলতা আর হাঁটু ব্যথার কারণে গুরুতর অসুস্থ জিন্নাতকে এখন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাত্র ২২ বছর বয়সেই জিন্নাত আলীর উচ্চতা ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি। কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের দরিদ্র কৃষক পরিবারের এই ছেলেটি এখন ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সেজো। অতি উচ্চতার কারণে শোয়া, বসা ও হাঁটাচলা করতে হয় ঘরেই। খাবার চাহিদাও তার বেশি। দরিদ্র বাবা-মা তাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারে না। অপুষ্টিসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত সে। সোমবার তাকে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমামের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের কেবিন ব্লকে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে গতকাল দুপুরে ডি বিল্ডিংয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তবে চিকিৎসকরা এখনো তার রোগ শনাক্ত করতে পারেননি বলে জানা গেছে। ৫ বছর আগে জিন্নাত আলীকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সে সময় তার রোগটিকে জাইগানটিজম বলে শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, জাইগানটিজম একটি টিউমার সংক্রান্ত রোগ। শরীরের অভ্যন্তরে টিউমারের প্রভাবে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হয়। ফলে শরীরের আকৃতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করে আক্রান্ত স্থান থেকে টিউমারটি অপসারণ করতে পারলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এ রোগ থেকে। তখন বলা হয়েছিল, টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করতে ৫ লাখ টাকা লাগবে। টাকার অভাবে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করাতে না পেরে ওই সময় হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বর্তমানে জিন্নাতের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। জিন্নাত আলীর পায়ের আকারও একটু বড় এবং ফোলা। জিন্নাত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার মাপের জুতা কোথাও পাওয়া যায় না। অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে হয়। না হলে খালি পায়ে হাঁটতে হয়। ডান পায়ের একটা ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে। বাম পা-টা আবার ইঞ্চি দুয়েক খাটো। গ্রামের পথে হাঁটলে মানুষ আমার দিকে চেয়ে থাকে। জিন্নাত আলীর বড় ভাই ইলিয়াস আলী বলেন, জন্মের সময় ওজন একটু বেশি ছিল ওর। স্থানীয় একটা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পড়ালেখা মনে রাখতে না পারায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। ওর বয়স যখন ৭-৮ তখন থেকেই ওর বাড়ন্ত শরীরকে অস্বাভাবিক মনে হতে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসকদের দেখালেও কোনো রোগ বা অস্বাভাবিকতা আছে বলে জানাতে পারেননি। তার পেট ভরবে এমন খাবারও আমরা ঠিকমতো দিতে পারতাম না। আমার ভাইয়ের চলাফেরা করতে, গাড়িতে করে কোথাও নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। উচ্চতার কারণে গাড়িতে বসানো যায় না। চিকিৎসার জন্য এক বছর আগে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে আবারও ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন তারা। পরে এলাকার ছেলেরা তার ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে তা স্থানীয় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের নজরে আসে। তিনিই তার চিকিৎসা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। তার পরামর্শেই এই হাসপাতালে জিন্নাতকে ভর্তি করানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক জানান, জিন্নাত কেবল মাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রোগ নির্ণয় করা হবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা চলবে। জানা যায়, বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘদেহী মানুষ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার অধিবাসী সুলতান কোসেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ২ দশমিক ৮ ইঞ্চি। সেন্টিমিটারে মাপলে যা দাঁড়ায় ২৫১ সেন্টিমিটারে। ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তিকে ২০১১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা বলে স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। গত ২০ বছরে ৮ ফুটের বেশি স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনিই আছেন। সুলতানের আগে দীর্ঘতম জীবিত ব্যক্তির রেকর্ডের মালিক ছিলেন চায়নার জি সুন, তার উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৮.৯৫ ইঞ্চি বা ২৩৬.১ সেন্টিমিটার।