মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর পাঁচ জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর অস্ট্রেলিয়া গতকাল পাঁচ বর্মি জেনারেলের সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়। পাঁচ সেনা কর্মকর্তা হলেন— ব্যুরো অব স্পেশাল অপারেশনস-৩ এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল অং কিয়াও জ, পশ্চিমাঞ্চলীয় মিলিটারি কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল মং মং সো, ৩৩তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং, ৯৯তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ১৫তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল থিন মং সো। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন বলেন, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যে ইউনিটগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন এই পাঁচ জেনারেল। মিয়ানমারের এই পাঁচ সেনা কর্মকর্তার অস্ট্রেলিয়া সফরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেরিস পেইন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশকিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলা হয়। এই মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান বলেন, ‘তাতমাদো যতদিন আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে, ততদিন শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে না। মিয়ানমারের উন্নয়ন এবং একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে দেশটির সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় বাধা।’ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিচার পাওয়ার পথ তৈরির প্রক্রিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল।