বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোজ্যতেল রপ্তানিতে ভারতের বাধা কাটেনি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভোজ্যতেল রপ্তানিতে ভারতের বাধা কাটেনি

এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনো ভারতে ভোজ্যতেল রপ্তানিতে বাধা কাটেনি। ফলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ভারতে পাঠানো প্রায় ৩শ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আটকে গেছে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর। আটককৃত তেলের কনসাইনমেন্ট ছাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তবে তাতে ফল মেলেনি।  জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ভারতের ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই, কলকাতা জোনাল অফিস) সেখানকার কাস্টমস কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত ভোজ্যতেলের চালান আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ভোজ্যতেল সাফটার নীতি লঙ্ঘন করেছে। ডিআরআই, কলকাতার অনাপত্তি না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের কনসাইনমেন্ট যাতে খালাস না করা হয়। চিঠি পাওয়ার পর কলকাতা কাস্টমস বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর পাঠানো প্রায় ৩শ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের কনসাইনমেন্ট আটকে দেয়। ফলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।  ৩০ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিআরআই  জানিয়েছে যে, তাদের ‘নো অবজেকশন’ ছাড়া সয়াবিন ও পামঅয়েলের কোনো কনসাইনমেন্ট খালাস করা যাবে না। এ অবস্থায় ভারতে পামঅয়েল ও সয়াবিন রপ্তানি বাধার সম্মুখীন। ইতিমধ্যে উভয় দেশের  স্থলবন্দরে বেশ কয়েকটি কোম্পানির কনসাইনমেন্ট আটকা পড়েছে। ফলে রপ্তানিকারকগণ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আটককৃত কনসাইনমেন্ট ছাড়ানোর পাশাপাশি ভারতে ভোজ্যতেল রপ্তানির বাধা কাটাতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সাফটার রুলস হচ্ছে আমদানিকৃত কোনো পণ্যের ওপর অন্তত ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতে পণ্য রপ্তানি করা যাবে। ভারত সন্দেহ করছে বাংলাদেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো ক্রুড তেল আমদানি করে যথাযথ ভ্যালু অ্যাড না করেই তাদের ওখানে রপ্তানি করছে। এ কারণেই তারা বাংলাদেশের ভোজ্যতেল রপ্তানিতে সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের ওই পদক্ষেপের পর গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ভোজ্যতেল সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানান। বৈঠকে পার্শ্ববর্তী দেশের মন্ত্রী জটিলতা সমাধানের আশ্বাস দেন। এ ছাড়া কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনকেও এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সাফটার রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মেনেই ভারতে ভোজ্যতেল রপ্তানি করছিলাম। এরপরও তারা আমাদের কনসাইনমেন্ট আটকে দিয়েছে। বিষয়টি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ ভারতীয় হাইকমিশনকে অবহিত করেছি। এমন কি ঢাকা সফরে যাওয়ার পর ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছেও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের আটকে থাকা কনসাইনমেন্টগুলো এখনো ছাড়া হয়নি। তিনি বলেন, ভারতে প্রায় ৩ কোটি মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ কোটি মেট্রিক টন তাদের আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো সরকারের অনুমতি নিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল রপ্তানির সুযোগ পেয়েছিল, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর