শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আনিসুল হকের সেই সব প্রকল্প

আলোর মুখ দেখছে ১১ ইউটার্ন প্রকল্প, ডিসেম্বরে খুলে দেওয়া হবে ৩টি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর যানজট সমস্যা কমাতে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি ব্যবহার নিয়ে সমস্যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় এই প্রকল্প। অবশেষে সমস্যার জাল ছিঁড়ে আলোর মুখ দেখছে স্থবির এই প্রকল্প। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেয়র আনিসুল হক। প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমির প্রয়োজন পড়ে। সংস্থাগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন মেয়র। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো খরচ ছাড়াই জমি ব্যবহারে অনুমতি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রয়োজনীয় জমির জন্য অর্থ দাবি করলে প্রকল্প খরচ বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। এ প্রকল্পের ব্যয়ের ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকার দিবে আর বাকি টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগানোর কথা। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় থেমে যায় যাবতীয় কার্যক্রম। তখন এই সমস্যার সমাধান চেয়ে গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। প্রকল্প পরিচালক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের হস্তক্ষেপে গত জুলাই মাসের ২৭ তারিখ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই প্রকল্পে ব্যবহারে জমি প্রদানে রাজি হয়। প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে এই ক্ষতিপূরণ যোগ করে সংশোধিত ডিপিপি গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে বলেন, ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে। উত্তরা অংশে রাজলক্ষ্মী, র‌্যাব অফিসের সামনে এবং খিলক্ষেতের কাউলা এলাকায় তিনটি ইউটার্নের কাজ চলছে। এই তিনটি ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ আগামী জুনে শেষ হবে। তবে জোয়ার সাহারা এলাকায় আর্মি গলফ ক্লাবের সামনে যে ইউটার্ন হওয়ার কথা ছিল সেখানে কিছু ত্রুটির বিষয়ে বলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ জন্য প্রকল্পে ১১টি ইউটার্নের জায়গায় ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সবগুলো নির্মাণ করছে এস এম কনস্ট্রাকশন। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর হাসিবুর রহমান শাহিন বলেন, চলমান তিনটি ইউটার্নের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে কাওলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের টিনের বেড়া বারবার বলার পরেও না সরানোয় কিছুটা সমস্যায় পড়েছি। মাঝে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। টানা কাজ করলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে সবগুলোর কাজ শেষ করতে পারব। মেয়র আনিসুল হকের কাছে প্রথম এই প্রকল্পের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান। প্রকল্প বাস্তবায়সে ঢাকাবাসী কী সুবিধা পাবে জানতে চাইলে এই প্রকল্প পরামর্শক বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা অন্যতম। সারাক্ষণ এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এখানে ইউটার্ন নির্মাণ হলে গাড়িগুলো কোনো সিগন্যালে না পড়েই ঘুরতে পারবে। আর এই ইউটার্নের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ জন্য কোনো গাড়িকে অন্য গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হবে না, সিগন্যালে আটকে গতিও কমাতে হবে না। খুব অল্প খরচে এবং কোনো দীর্ঘ খোঁড়াখুঁড়ির ঝঞ্ঝাটে না পড়েই যানজটমুক্ত সড়ক পাবে নগরবাসী।

সর্বশেষ খবর