শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিভক্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির আলোচনায় বাবু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভক্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির আলোচনায় বাবু

ঢাকা-১৯ (সাভার ও আশুলিয়া) আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বর্তমান এমপি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. এনামুর রহমান এনামের বিপক্ষে মাঠে আছেন দলের ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপির মূল আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন বাবু। তবে প্রার্থী রয়েছেন আরও একাধিক।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ কবির, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক হাসিনা দৌলা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক  ফারুক হাসান তুহিন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল এবং তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। এ এলাকা এক সময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি হারায় বিএনপি। সেবার দলটির প্রার্থী ছিলেন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু। এবারও তারই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিবহন ব্যবসায়ী মো. কফিলউদ্দিন আহমেদও ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাভারের সাবেক পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমানের সঙ্গে সালাহউদ্দিন বাবুর বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া মহাজোটের সমর্থন নিয়ে এ আসনের প্রার্থী হতে চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ এবং সাভার উপজেলা আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এনামুর রহমান এনাম এ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের তাত্ক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশবাসীর নজর কাড়েন ডা. এনাম। রানা প্লাজা নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা মুরাদ জংকে বাদ দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা. এনামকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নিয়মিত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন্দল নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে তিনি। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন চেয়ে মাঠে নামায় বেকায়দায় ডা. এনাম। সাবেক এমপি মুরাদ জং বেশ কিছুদিন নীরবে কাটিয়ে নির্বাচনের আগে ফের সরব হয়েছেন। নিজের সময়ে করা উন্নয়ন কাজের প্রচার চালিয়ে গণসংযোগে নেমেছেন তিনি। পারিবারিকভাবে এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে মুরাদ জংয়ের। তার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক এমপি প্রয়াত আনোয়ার জং সাভার এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ফিরোজ কবির সাভার উপজেলার তিন দফায় চেয়ারম্যান ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন প্রার্থী হিসেবে এর মাঝে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। প্রতিদিন তুহিন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সভা, সমাবেশ করছেন। তার বাবা দীর্ঘদিন থেকে সাভারে প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ। কর্মীদের প্রিয়মুখ হিসেবে দলের একটি বড় অংশই তুহিনকে এবার সাভার আসনে দেখতে চায়। বিভিন্ন জরিপেও তুহিনের পক্ষে অবস্থানের কথা ওঠে আসছে। দলের উপজেলা সভাপতি হিসেবে হাসিনা দৌলার এলাকায় প্রভাব রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে তিনি রাজপথে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। ডা. এনামুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ সংসদীয় আসনের উন্নয়নের জন্য সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। যে কোনো সমস্যা বা নাগরিক সংকট নিরসনে আমি সব সময় সচেষ্ট ছিলাম এবং আছি। সাভার আশুলিয়াকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্যও নানা ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই বিজয়ী হবেন বলে মনে করেন তিনি। দলে তাকে নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব কিংবা গ্রুপিং থাকার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জন্মগতভাবেই আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুঃসময়ে আমরাই সাভারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আগলে রেখেছিলাম। কিন্তু ২০১৩ সালের রানা প্লাজার দুর্ঘটনার সময় কিছু মানুষ নেত্রীর কাছে আমাকে ভুল বুঝিয়েছিলেন এবং তাই হয়তো মনোনয়ন পাইনি। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমিও যাইনি। কিন্তু যারা আমার বিরুদ্ধে যেসব ভুল তথ্য দিয়েছিলেন, তাদের সম্পর্কে এবং আমার বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অবগত হয়েছে। ফিরোজ কবির বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে এবং এখানে ‘ধার করা প্রার্থী দেওয়া হলে দলের যে ভরাডুবি হবে, নেত্রী (শেখ হাসিনা) সেটা বোঝেন। তাই স্থানীয় হিসেবে তাকেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে মনে করেন তিনি। হাসিনা দৌলা বলেন, দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত তিনি। তবে মনোনয়ন প্রশ্নে দলের যে কোনো সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তিনি। আবু আহমেদ নাসিম পাভেল জানান, তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে তার বিশ্বাস। ফারুক হাসান তুহিন বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন কাউকে প্রার্থী করা হলে এ আসনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব। এমন বিবেচনায় তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে মনে করেন তিনি। ফখরুল আলম সমর বলেন, তিনি দুধের মাছি নন। দুঃসময়ে দলের সঙ্গে ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। নৌকার জয়ের জন্যই তিনি কাজ করবেন। বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ বলেন, তার দল জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করলে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। আর মহাজোটগত নির্বাচন হলে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেবেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জোটের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও দলের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। এবারও জাতীয় পার্টি তাকেই মনোনয়ন দেবে বলেই তার বিশ্বাস। সাভার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থী তো এখন দেওয়া হয় না। সেটা করা হলে তো ডা. এনাম এমপি হতে পারেন না। কারণ ডা. এনাম কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি বরং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ছিল ভালো যোগাযোগ। সেই তিনি এমপি হলে আওয়ামী লীগের কী অবস্থা সেটা বুঝে নেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মনোনয়ন নির্ভর করে তৃণমূল বিএনপি ও দলীয় হাইকমান্ডের ওপর। আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করব।

সর্বশেষ খবর