শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাজীর বিরুদ্ধে একাট্টা রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের মাঠে একা হয়ে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মামলা-হামলা, সব কিছুতে আত্মীয়করণ, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা এবং বিতর্কিত ও হাইব্রিডদের অপকর্মের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তন চান তারা। কোনো বহিরাগতকে নয়, রূপগঞ্জের মানুষকে তারা এমপি হিসেবে দেখতে চান।

এ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ মোট ১৬ জন। এর মধ্যে ১৫ জন প্রার্থী এক হয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, গাজীকে বাদ দিয়ে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। তারা বলছেন, গাজী রূপগঞ্জের সন্তান নন। ‘ভাড়াটিয়া’কে নয়, দলীয় সভানেত্রীর কাছে রূপগঞ্জের মানুষের প্রাণের দাবি ‘রূপগঞ্জের সন্তানকেই নৌকা দিতে হবে’। এ জন্য তারা দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন।  সূত্র মতে, ঢাকার অদূরে গুরুত্বপূর্ণ আসন নারায়ণগঞ্জ-১। এই আসনের বর্তমান এমপি স্থানীয় বাসিন্দা নন। তিনি এলাকায় ‘ভাড়াটিয়া’। গাজী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার মতের বিপক্ষে যে নেতা-কর্মীরাই গেছেন, তার ওপর নেমে এসেছে অমানুষিক নির্যাতন ও জুলুম। শুধু তাই নয়, বর্তমানে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামেই ২ হাজার ৭০০ মামলা। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির আমলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নামে এত মামলা ছিল না। আবার এমপির নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার বিরোধিতা করায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। এখানেই শেষ নয়, সব কিছুতেই তিনি আত্মীয়করণ করেছেন। এমপি হওয়ার পর স্ত্রী হাছিনা গাজীকে তারাব পৌরসভার মেয়র বানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি রূপগঞ্জ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। ছেলেকে বানিয়েছেন কয়েকটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সব কিছুতে তার আত্মীয়করণের কারণে নেতা-কর্মীরা ফুঁসে উঠেছেন। এমপি গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় মার্কেটের নামে স্টেডিয়ামের হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের। অবশ্য কৌশল করে মার্কেটের নাম দিয়েছেন ‘নীলা মার্কেট’। রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলার নামে প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেটের সব সুবিধা গাজীর পকেটেই যায় বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে রটছে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আরও অভিযোগ করেন, গত দশ বছরে রূপগঞ্জে এমপির ব্যবসা-বাণিজ্যে যেভাবে প্রসার ঘটেছে সেভাবে আওয়ামী লীগের বা এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। রূপগঞ্জের যে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান হচ্ছে তার প্রায় সবই হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে। 

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি রূপগঞ্জে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেই তার  বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। যারা এখন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার তাদের মধ্যে রয়েছেন, রূপগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ভুঁইয়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক, মেজর (অব.) মশিউর রহমান, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি খালেদা খানম, মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ডের সাবেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জব্বার খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা খান মো. শামীম আজিজ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য মোশারফ হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল ফজল, আওয়ামী লীগ নেতা গরীব মাহবুব, মোতাহার হোসেন, মানবাধিকারকর্মী কাজী রিতা।  নেতা-কর্মীদের নামে হামলা-মামলা, নির্যাতনের কারণে এবার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে গত শনিবার গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ১৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এক হয়েছেন। তারা ঘোষণা করেছেন, আগামী নির্বাচনে অবশ্যই রূপগঞ্জের সন্তানদের মধ্যে যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে। সভায় বক্তব্য দেন আবদুল হাই, শাহজাহান ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্যের ডাকে কেউ এগিয়ে আসছে না। তিনি কর্মীবান্ধব নন। এমপি হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি রূপগঞ্জে অনেকেই আছেন। সে কারণে আমরা ভাড়াটিয়া চাই না।’

সর্বশেষ খবর