শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড়ে খাস জমি দখলে উৎসব

৫ লাখ অবাঙালিকে পুনর্বাসনের কূটচাল

মানিক মুনতাসির, পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে

পাহাড়ে খাস জমি দখলে উৎসব

পার্বত্য অঞ্চলের গহিন বনের ভিতর কোথাও কোনো বসতি না থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে দখলে নেমেছে একটি মহল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা গহিন অরণ্যে ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে ভূমি দখলের নতুন কৌশল নিয়েছে একটি কুচক্রী মহল। পার্বত্য অঞ্চলের গহিন বনের ভিতর কোথাও কোনো বসতি না থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয় চোখে পড়বে বিভিন্ন স্থানে। শত শত হেক্টর বনভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জুম চাষের নামে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে জুম চাষের বিকল্প চাষাবাদের পথ দেখালেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না পাহাড়বাসী। অন্যদিকে পাঁচ লাখ অবাঙালিকে নতুন করে পুনর্বাসনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে সরকারকে। জানা গেছে, এ সংক্রান্ত গঠিত একটি টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দিয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে এখনো পাঁচ লাখ মানুষ পুনর্বাসনের বাইরে রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে সর্বশেষ ২১টি পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সমাপ্ত ঘোষণা করে সরকার। যার সঙ্গে তখন একমতও পোষণ করেছিল এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। কিন্তু এখন আবার নতুন করে পাঁচ লাখ লোকের তালিকা দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আকস্মিকভাবে পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ সরকার ও পাবর্ত্য অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রত্যাগত শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের নবম সভা সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই সভায় টাস্কফোর্স সরকারি অর্থায়নে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৮১ হাজার ৭৭৭ উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনে অনুমোদন দেয়। সভায় পুনর্বাসনের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রত্যাগত ২১ হাজার ১০০ শরণার্থী পরিবারের তালিকাও অনুমোদন দেওয়া হয়। এ দুই শ্রেণির এসব পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে প্রায় পাঁচ লাখ অবাঙালি পুনর্বাসনের আওতায় আসবে। সূত্র জানায়, শান্তিচুক্তির পর গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সরকারপন্থি থাকলেও বর্তমানে তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক বাঙালি হলেও হঠাৎ অবাঙালি পুনর্বাসনের দাবি নতুন উত্তেজনাও তৈরি করেছে। এ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার কারবারিদের (জনপ্রতিনিধি) মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যেও এ নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে খুন, অপহরণ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এতে আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর নিজেদের মধ্যে হানাহানিও বেড়েছে। এরই মধ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওই পাঁচ লাখ অবাঙালিকে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন পাহাড় নতুন করে দখল করতে শুরু করেছে সুযোগ সন্ধানীরা। যেসব জায়গায় বসতি গড়ে তোলা হবে। পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের চূড়ায় মূর্তি স্থাপন করে তা দখলে নিয়ে বসতি গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটের আগে চাপের মুখে সরকারকে বাধ্য করানো হবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য। আর আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজেদের পক্ষের প্রার্থীকে জেতাতে তাদের নানাভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। যার মাধ্যমে পার্বত্যবাসীকে দেশের মূল ধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য এ কৌশল নিয়েছে সেখানকার আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস। এদিকে সম্প্রতি আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে বাঙালিদের জমির খাজনা আদায় না করার নির্দেশ দিয়েছেন—যা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। শুধু তাই নয়, ভূমি কমিশন আইন সংশোধন পাস হওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো রিজার্ভ ফরেস্ট নেই, সরকারের কোনো খাস জমি নেই। যা অত্যন্ত আইন বিরোধী মন্তব্য। এ প্রসঙ্গে গত ২২ অক্টোবর সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সেনাবাহিনী। কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো আঞ্চলিক সংগঠন কিংবা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিশৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর