শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা বদলে দেবে ‘চলন্ত রাস্তা’

জিন্নাতুন নুর

ঢাকা বদলে দেবে ‘চলন্ত রাস্তা’

ঢাকার যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে অগণিত কর্মঘণ্টা। অপচয় হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। সেই সঙ্গে বাড়ছে যাত্রী, পথচারী ও যানবাহনের চালকদের মানসিক চাপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যানবাহনের আধিক্যের কারণে ঢাকায় বায়ুদূষণের হারও অতীতের যে কোনো সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এদিকে ঢাকাবাসীকে যানজট সংকট থেকে রেহাই দিতে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি উড়াল সড়ক। কিন্তু এরপরও যানজট নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যানজটের হাত থেকে বাঁচতে অতঃপর নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। এই যখন অবস্থা তখন ঢাকাবাসীকে যানজটের হাত থেকে রক্ষা এবং শহরের বায়ুদূষণ কমাতে অভিনব এক সমাধান দিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাইয়ীদ। নগরবাসীর স্বস্তিদায়ক চলাচলের জন্য তিনি ‘চলন্ত রাস্তা’ বা ‘মুভিং রোড’ নামক এক ধারণার উদ্ভাবন করেছেন। গতকাল এ ব্যাপারে আবু সাইয়ীদের সঙ্গে তার মিরপুরের বাড়িতে বিস্তারিত কথা হয়। তিনি বলেন, ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে তুলনামূলক কম স্থানের ওপরই এই অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। আর তেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় এটি হবে পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা। উড়াল সড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তুলনায় এর অবকাঠামো তৈরিতে লাগবে কম স্থান। মূলত চলন্ত রাস্তার ধারণায় একটি গাড়িকে সড়কের ওপরে উঠানো বা নামানোর পরিবর্তে একজন মানুষকে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যেখানে যাত্রী সিটে বসে বা দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এই ধারণাটি বাস্তবায়ন করতে হলে রাজধানীর বর্তমান সড়কের মাঝ বরাবর বা সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ থেকে ২০ ফুট উপরে ৬ ফুট প্রস্থের পাশাপাশি দুটি চলন্ত রাস্তা স্থাপিত করতে হবে। আর একটি রাস্তা অপরটির বিপরীত দিকের গতিতে চলবে। দুই রাস্তার দুই দিকে আনুমানিক ৮ ফুট প্রস্থের ২টি প্লাটফর্ম থাকবে। প্রতিটি রাস্তার দুটি লাইনের ওপরে ৭২ ইঞ্চি বাই ৩০ ইঞ্চি একের পর এক পাটাতন স্থাপিত হবে। এপাশওপাশ মিলে চলন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৫০ কি.মি. যাই হোক না কেন চলন্ত রাস্তা অখণ্ড যান হিসেবে চলমান থাকবে। শহরের ভিতরে চলাচলের জন্য একটি চলন্ত রাস্তার গতি ২০ থেকে ৬০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত গতিতে চলন্ত রাস্তা ১ থেকে ৩ মিনিট চলার পর ৫ থেকে ১৫ সেকেন্ডের জন্য থামবে। কোনো একটি শহরে কোনো একটি চলন্ত রাস্তার কত গতি হবে এবং কত মিনিট পর কত সেকেন্ডের জন্য থামবে তা নির্ধারিত হবে সার্বিক বাস্তবতার ওপর। অর্থাৎ একটি শহরে বিভিন্ন চলন্ত রাস্তার জন্য বিভিন্ন গতি নির্ধারিত হতে পারে। সাধারণত একটি রুটের বাস বা ট্রেন থেকে নেমে অন্য একটি রুটের কোনো বাস বা ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। বৃষ্টির দিনে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। কিন্তু চলন্ত রাস্তায় যাত্রীদের এই ঝক্কি পোহাতে হবে না। একটি শহরে স্থাপিত বিভিন্ন চলন্ত রাস্তা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে কিন্তু সব রাস্তার প্লাটফর্ম একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এতে যাত্রীরা এক রাস্তা থেকে নেমে প্লাটফর্ম ধরে অন্য রাস্তায় যেতে পারবে। বৃষ্টিতে শহরের কিছু অংশ ডুবে গেলেও চলন্ত রাস্তা তার নিজ গতিতে চলতে থাকবে। উপস্থাপিত এই প্রকল্পে ঢাকায় প্রাথমিকভাবে যে রুটগুলোর ওপর চলন্ত রাস্তা স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো— জয়দেবপুর-মহাখালী-বংশাল (৪৩.৬ কি.মি.); বিশ্বরোড-বাসাবো-সায়েদাবাদ (২০.৩ কি.মি.); কালশী-মিরপুর১২-খামারবাড়ি-ফার্মগেট শাহবাগ (১২.৮ কি.মি.); আসাদগেট-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-সায়েন্সল্যাব-মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া (২১.১ কি.মি.); শিশুমেলা-আগারগাঁও-মহাখালী-বাড্ডা-লিংক রোড (১০.৬ কি.মি.); কাকলী-গুলশান২-গুলশান-১ (৪ কি.মি.) ফার্মগেট-ল্যাবএইড (৪ কি.মি.)সহ মোট ১৮০ কি.মি. এর ওপর সড়কে এই চলন্ত রাস্তা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ আছে। চলন্ত রাস্তার মডেলের উদ্ভাবক চলচ্চিত্র প্রযোজক আবু সাইয়ীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাঁচটি বিষয় মাথায় রেখে এই মডেলটি তৈরি করেছি। তা হলো—যানজটমুক্ত শহর, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা, জ্বালানি খরচ কম, পরিবহন খাতের বার্ষিক ব্যয় কমানো, এর বাস্তবায়ন খরচ কম এবং সাধারণ কারিগরি দক্ষতায় এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এটি নির্মাণে খরচ হবে মেট্রোরেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অর্থ। এ ছাড়া এর কারিগরি জটিলতা কম হওয়ার কারণে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম। চলন্ত রাস্তার একটি অংশের যান্ত্রিক মডেল তৈরি করে তা মিরপুরে নিজ বাড়ির গ্যারেজে প্রদর্শনের জন্য রেখেছেন আবু সাইয়ীদ। সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা এরই মধ্যে এটি দেখে এসেছেন। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গঠিত কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রকল্পটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার উপযোগিতার জন্য গত ১৬ আগস্ট একটি সভা করে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মো. আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় কার্যালয়ের মহাপরিচালক (ইনোভেশন) মো. আশরাফ উদ্দিন সম্প্রতি এই মডেল প্রকল্পটি নিজে দেখে এসেছেন বলে জানান আবু সাইয়ীদ। আগামী ৩০ অক্টোবর প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আবু সাঈদকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর