বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই দিনে ক্ষতি সাত হাজার কোটি টাকা

ধর্মঘটে রপ্তানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত, শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত

রুহুল আমিন রাসেল

দেশব্যাপী দুই দিনের নৈরাজ্যকর পরিবহন ধর্মঘটে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার তথ্য দিয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। আর বেনাপোল কাস্টমস জানিয়েছে, দেশের এই প্রধান স্থলবন্দরে সরকার দুই দিনে ৬২ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এফবিসিসিআই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল ও অবরোধের কারণে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছিল। এরপর চলে গেছে প্রায় ৫ বছর। এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা বেড়েছে অনেক। বেড়েছে অর্থনীতির আকার। এসব বিবেচনায় নিলে গত দুই দিনের নৈরাজ্যকর পরিবহন ধর্মঘটে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি—বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দুই দিনের ধর্মঘটে পোশাকশিল্পে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি—ডিসিসিআই ২০১৫ সালে হরতাল এবং অবরোধে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে জরিপ করে। সেই জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয় প্রায় ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। তবে প্রতিদিন শিল্প উৎপাদন সক্ষমতায় ২৫ শতাংশ ক্ষতি ধরলে এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তে এসে পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষতির পরিমাণ কত, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসিসিআইর একজন নেতা বলেন, এবারের পরিবহন ধর্মঘটে গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এফবিসিসিআই বলেছে, ধর্মঘটে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পণ্য সময়মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহ করা যায়নি। কোথাও কোথাও পণ্য জট হয়েছে। যানবাহন না থাকায় কাঁচামাল পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়াও রপ্তানি পণ্যসামগ্রী জাহাজীকরণ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ী সমাজ সব সময়ই নেতিবাচক কর্মসূচির বিপক্ষে। দেশের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বিরাজমান স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ন রাখা প্রয়োজন। দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের গতিশীলতা অব্যাহত দেখতে চান ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ধর্মঘটের কারণে তিনটি খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো- পরিবহন, উৎপাদন ও পর্যটন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বন্দরে দুই দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার আটকে আছে। যার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। তাই ধর্মঘটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন তৈরি পোশাকশিল্প। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ভোগ্যপণ্য খালাস না হওয়ায় বাজারে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। কারণ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর।

সর্বশেষ খবর