বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত দল বদলের সুযোগ

গোলাম রাব্বানী

মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত দল বদলের সুযোগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দল বদলে তত সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে ২৬ অক্টোবর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন রাজনীতিক। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, এরশাদ আমলের দুই প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। ২৩ এপ্রিল জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এ টি এম আলমগীর। এর আগে তিনি কুমিল্লা-১০ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) সংসদীয় আসন থেকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিতে  ফেরেন স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও পরে যোগ দেন বিএনপিতে। ২০০১ সালে বিএনপির টিকিট নিয়ে সংসদ সদস্য হন। পরে ২০০৮ সালে স্বতন্ত্রী প্রার্থী হয়ে হেরে যান। তবে আর বিএনপিতে সক্রিয় হননি তিনি। ২০১৪ সালে ফের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে এমপি হন। ১ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এম হারুন অর রশিদ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের আগে দল বদল করে নতুন দলের প্রার্থী হতে এখন কোনো বাধা নেই। এর আগে দলীয় প্রার্থী হতে তিন বছর দলে থাকার বিধান থাকলেও দশম সংসদের আগে সেই বিধান বিলুপ্ত করা হয়। তাই তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন তথা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দল বদলের সুযোগ রয়েছে। এবারও দলীয় প্রার্থী হতে, দল মনোনীত প্রত্যয়নপত্রসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৪ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হলে মনোনয়ন দাখিলের জন্য ১০/১৫ দিন সময় দেওয়া হতে পারে। সেই হিসেবে দল বদলের সুযোগ সব মিলে তিন সপ্তাহ বা ২০/২১ দিন রয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নিবন্ধিত দলগুলো তফসিল ঘোষণার পরই আসনভিত্তিক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে। এরই মধ্যে প্রধান দলগুলো ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা গুছিয়ে রাখছে। এ অবস্থায় প্রধান দলগুলোয় যেতে ভিড় থাকবে যেমন, তেমনি কোনো কোনো দলে ভিড়বে মনোনয়নবঞ্চিতরা। আর একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলোয় জোট গঠনের যেমন ঢেউ লেগেছে, তেমনি দল বদলে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলছুট কেউ কেউ ফিরছেন নিজের দলেও। আবার সাবেক আমলাদের রয়েছে দৌড়ঝাঁপ। নিষ্ক্রিয় থাকা অনেকেই সক্রিয় হচ্ছেন দলে ফিরে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে হলে অন্তত তিন বছর সংশ্লিষ্ট দলে থাকার বাধ্যবাধকতার বিধান (আরপিও ১২ অনুচ্ছেদের ১ দফা ঞ) যোগ হয়েছিল নবম সংসদ নির্বাচনে; তাতে ডিগবাজির পথ বন্ধ হয়েছিল ভোটের আগে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিধানটি বিলোপ করে আরপিও সংশোধন হয়; দল বদলের সুযোগ উন্মুক্ত হয়ে যায়। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মুখে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থী। ১৪৭ আসনের ভোটে দল বদলকারীদের তৎপরতা তেমন ছিল না। তবে এবার ভোটের আঁচ লাগতেই দলছুটরাও সক্রিয় হয়েছেন। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বাকি দিন দশেক। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটের আগে দল বদল করে নতুন দলের প্রার্থী হতে এখন কোনো বাধা নেই। দলীয় প্রার্থী হতে দল মনোনীত প্রত্যয়নপত্রসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দল বদলের সুযোগ রয়েছে বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তারা। বর্তমানে ইসিতে ৩৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াত ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীও যাতে অন্য দলের হয়ে ভোট করতে না পারেন সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ পরিস্থিতিতে ‘ডিগবাজি’ শেষ করতে হবে আগামী দুই-তিন সপ্তাহে।

সর্বশেষ খবর