বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিড়ম্বনার শেষ নেই বাস টার্মিনালে

মোস্তফা কাজল

বিড়ম্বনার শেষ নেই বাস টার্মিনালে

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মেগাসিটি ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি নাগরিক সেবা। পরিবহন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং আধুনিকায়নের অভাবে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। বিড়ম্বনার মূল কেন্দ্রে রয়েছে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বলেন, ‘গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। শিগগিরই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ শুরু করব। আশা করি দ্রুতই যাত্রীদের সমস্যার সমাধান হবে।’ সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মূলত বাস টার্মিনালে সমস্যা তৈরি হয়। ঢাকা শহরের প্রধান কয়েকটি আন্তজেলা বাস টার্মিনালের অন্যতম সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে যে কোনো পরিবহনে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছানো যায়। এসব পরিবহনের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, লোকাল বাস এবং সিটি সার্ভিস বাস ও মিনিবাস অন্যতম। সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে সাধারণত সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল জেলার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যায়। এই বাস টার্মিনাল প্রায় ১০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে প্রায় ১ হাজার ৯০০ বাস রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এ টার্মিনালের প্রধান সমস্যা হলো, প্রবেশমুখে অসহনীয় যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আগত যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় উভয় দিকের যানবাহন এলোমেলোভাবে চলাচল করে। যাত্রীদের অভিযোগ, দিনের বেলায় কোনোরকমে এখানে চলাচল করা গেলেও রাতে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এ বাস টার্মিনালের টয়লেট নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। টার্মিনালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা দুর্বল। অধিকাংশ জায়গায় আলোর অভাবে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়।

গাবতলী বাস টার্মিনালেও সমস্যার শেষ নেই। এই বাস টার্মিনাল ও আশপাশ এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ বাস রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এ টার্মিনালে যাত্রীদুর্ভোগ চরমে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে বাস না ছাড়া, যাত্রীদের মালামাল টানাটানি করা অন্যতম। এ টার্মিনালের সীমানাপ্রাচীর না থাকায় রাতের বেলায় চোরের উপদ্রব বাড়ে। টার্মিনালে রাতে মাদকসেবীদের আড্ডার অভিযোগ রয়েছে। এ টার্মিনাল থেকে আন্তজেলা ও সিটি সার্ভিসের আট শতাধিক বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহরের অন্তর্নিহিত মৌলিক দুর্বলতা, যা তৈরি হয়েছে ভূমি ও পরিবহন নিয়ে অপরিকল্পনার কারণে। এমনকি নতুন স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) বাস্তবায়ন করার পরও মোট সড়ক নেটওয়ার্ক হবে প্রায় ১ হাজার ৪১৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার ও ফুটপাথ এলাকা দাঁড়াবে যথাক্রমে ১৫ ও ১১ বর্গ কিলোমিটার। অন্যদিকে নকশার কারণে বিদ্যমান সড়কগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ঢাকা শহরে আসা-যাওয়া করা বাসযাত্রীদের সেবা দিচ্ছে তিনটি বাস টার্মিনাল—গাবতলী ৪০ শতাংশ, মহাখালী ২৫ শতাংশ ও সায়েদাবাদ ৩৫ শতাংশ। এ তিন টার্মিনালের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। গাবতলী থেকে গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ভিন্ন একক বাস সার্ভিস রয়েছে। কিন্তু এ সংযুক্ত রুটটি ঘোরপ্যাঁচযুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সংযুক্ত সড়ক, বাঁয়ে টার্ন, ডানে টার্ন ও স্থানীয় রাস্তা, শাখা রাস্তা ইত্যাদি। এ ছাড়া সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে মহাখালী টার্মিনালের মধ্যে কোনো সংযুক্ত সেবা নেই। ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার গাড়ি ছেড়ে যায় মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে। সরেজমিন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আছে বাস। ময়মনসিংহগামী একটি বাস দীর্ঘ সময় গেটে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। এতে দুই পাশে আটকা পড়ে অসংখ্য অটোরিকশা এবং বেশ কয়েকটি বাস। একসময় এ নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন পরিবহন শ্রমিকরা। ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, দিনের বেলায়ও অন্ধকার স্যাঁতসেতে টার্মিনালের পরিবেশ। মাঝে মাঝে জ্বলছে একটি-দুটি বাল্ব। অধিকাংশই নষ্ট। বসার বেঞ্চগুলো ছিন্নমূল মানুষের দখলে। ভিতর থেকে খুলে গেছে বেঞ্চের স্টিলের অংশ। টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, বোর্ডের দরজার ওপর ফাঁকা অংশ রয়েছে। ভিতরে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। মাঝখানে এটা বাল্ব লাগানো। টয়লেটের ওপরে নিচ দিয়ে যেটুকু আলো আসে সেটাই ভরসা। টয়লেটে গেলেই যাত্রীদের গুনতে হয় পাঁচ টাকা। টয়লেটের দায়িত্বরত ব্যক্তি জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য তারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেন। সিটি করপোরেশন থেকে পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থা না করায় তাদেরই তা করতে হয় বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর