রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
৪৭তম সংবিধান প্রণয়ন দিবস আজ

সংবিধান ছাপা বন্ধ আড়াই বছর

আরাফাত মুন্না

আজ ৪ নভেম্বর। সংবিধানের ৪৭তম প্রণয়ন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে সংবিধান কার্যকর হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সংবিধানে ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ দলিল (সংবিধান) ছাপা বন্ধ রয়েছে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় নতুন করে ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে পুনর্বহাল-সংক্রান্ত ওই সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ চেয়ে বছরখানেক আগে আবেদন করা হলেও শুনানির উদ্যোগ নেই রাষ্ট্রপক্ষের। ফলে উচ্চ আদালতসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরকে এখনো        পুরনো সংবিধানের কপিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেসে (বিজি প্রেস) বাংলা ও ইংরেজিতে ছোট-বড় ৩ হাজার কপি সংবিধান ছাপা হয়। এরপর ২৬ মাস ধরে সংবিধান ছাপা বন্ধ রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালতে ষোড়শ সংশোধনীর রায়-সংক্রান্ত রিভিউ আবেদন বিচারাধীন থাকায় নতুন করে সংবিধান ছাপা সম্ভব হচ্ছে না। রিভিউর রায় দেখে সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীসহ সংবিধান ছাপানো হলে আদালত অবমাননা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে ষোড়শ সংশোধনী ছাড়া সংবিধান ছাপানো হলে সংসদ থেকে শোকজ নোটিস পাঠানো হতে পারে। তাই সরকার আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। তবে ষোড়শ সংশোধনীসহ সংসদে পাস হওয়ার আগে ছাপানো সংবিধানটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

গত বছর ২৪ ডিসেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০৮ পৃষ্ঠার এই রিভিউ আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনে রায় রিভিউর জন্য রাষ্ট্রপক্ষে ৯৪টি সুনির্দিষ্ট যুক্তি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি এসব যুক্তির ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পুরো রায় বাতিল চাওয়া হয়। তবে আবেদনের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানি শুরুর জন্য কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারপতি ছিল না। এটিও শুনানি শুরু না হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। তবে নতুন করে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ হওয়ায় শুনানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখনই ঝুলে থাকা এ বিষয়টির সুরাহা করতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেই মনে করেন আইনজ্ঞরা। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ষোড়শ সংশোধনী-সংক্রান্ত রিভিউ আবেদনটি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আসা অনেক বিষয় নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণা রয়েছে। অনেকের মনে ক্ষোভ রয়েছে। তাই এটা বেশি দিন ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যেহেতু রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেছে, তাদেরই এর শুনানি শুরু করতে আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করতে হবে। রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত এ উদ্যোগটা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। কবে নাগাদ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। আদালত যখন চাইবে তখনই শুনানি হবে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী বলে রায় ঘোষণা করে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। পরে ১ আগস্ট এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এ রায়ে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, সংসদসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও মন্তব্য করে আপিল বিভাগ। এ রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন সরকারদলীয় নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর