রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আলোচনা সভা

গণতন্ত্র কেউ ধ্বংস করতে পারবে না : কামাল, বিজয় ঠেকাতে পারবে না : কাদের সিদ্দিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্র কেউ ধ্বংস করতে পারবে না : কামাল, বিজয় ঠেকাতে পারবে না : কাদের সিদ্দিকী

কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ আয়োজিত জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্র কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। গতকাল রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ। এ সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পরেও বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা আমরা দেখেছি কিন্তু কেউ সফল হতে পারেনি। কেউ পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর কাছেই আমরা এই সাহসটা পাব, ভরসাটা পাব। তিনি গণতন্ত্রের জন্য বারবার যে ঝুঁকি নিয়েছেন, তার সুফল সবাই ভোগ করবে। এ ছাড়া জাতি হিসেবে আমাদের দৃঢ়তা আছে। ১৯৭১ সালে তা প্রমাণ করেছি। দেশের সংকটকালেও আবারও সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। স্বাধীনতার স্বপ্ন এখনো অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, এখনো ধনী-গরিব বৈষম্য রয়েছে। বেকার সমস্যার সমাধান হয়নি। গ্রামের মানুষ এখনো শিক্ষা-স্বাস্থ্যবঞ্চিত। আর তিন বছর পরেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। এই তিন বছরে আমাদের অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা আর লাখো শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করাই আমাদের কাজ। এই লক্ষ্য নিয়েই ঐক্য সুসংহত ভূমিকা পালন করবে। বৈষম্যমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য।

সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, দেশের মালিক জনগণ। মালিকের যেমন ভোগ করার অধিকার থাকে, তেমনি তা রক্ষা করার দায়িত্বও থাকে। সবাইকে সঠিক দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। ব্যক্তি-দলীয় স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু আজীবন এটাই বলেছেন এবং পালন করেছেন বলেই আমরা এর সুফল ভোগ করছি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হতে জানে— এটা বিশ্ববাসী বিশ্বাস করেছে আমাদের স্বাধীনতার পর। কিসিঞ্জার ইয়াহিয়াকে বলেছিল, বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ অসম্ভব। এদের দলাদলি থাকবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা ও বাংলার মানুষ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ’৭১ এর স্মৃতি ধরে আমরা ভবিষ্যতের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। কারণ স্বৈরশাসকরা জনগণকে দমিয়ে রাখতে কম চেষ্টা করেনি। কেউ বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দমিয়ে রাখতে পারবেও না— এই হলো ইতিহাস।

কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ১০-১২ দিন আগেও ড. কামাল হোসেন কোথাও নির্বাচন করলে বিজয়ী হতে পারতেন না। আজ তিনি সারা দেশের নেতা। তিনি এখন যেখানেই ভোট করবেন সেখানেই বিজয়ী হবেন। এটি আমার চ্যালেঞ্জ। আর যেদিন প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, সেদিনই বিজয় হয়ে গেছে। আমি যেখানেই থাকি না কেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সময় চেয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি একদিন সময় চেয়ে নিচ্ছি। আগামী ৫ নভেম্বর আমি আমার অভিমত জোটের নেতাদের সামনে জানিয়ে দেব। সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আমাকে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে বলেছেন। আমি যদি যোগ দেই, তাহলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। আর যদি আপনাদের সঙ্গে নাও থাকতে পারি, তাও জানিয়ে দেব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের আগে মনে হয়েছিল আওয়ামী লীগ ২০ সিট পাবে উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, গত চার দিন ধরে দেখছি, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ১৯ সিট পাবে। এর বেশি পেলে আমাকে সাজা দিয়েন।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছি। জয়লাভ করা ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না। জনগণ যখন মাঠে নেমেছে, তখন আন্দোলনের ফসল ঘরে না তুলে ফিরে যাবে না। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার, তা করা হবে। দেশে নির্বাচন না হলে তার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে বলে উল্লেখ করে আ স ম আবদুর রব বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে, নিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টি না হলে, তার জন্য নির্বাচন না হলে এর দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর সরকারকেই বহন করতে হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডেকেছেন যখন আবারও যাব, ওই দরজা বন্ধ করতে পারবেন না। আবার সংলাপে বসতে হবে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সংলাপ করতে হবে। সমাধানের আগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণা করলেই সব শেষ হয়ে যাবে না। মনে রাখবেন, তফসিল ঘোষণার পরও পরিবর্তনের ইতিহাস এদেশে আছে। তারা ক্ষমতায় থাকতে চান। সংলাপ তারা চান না। মানুষ যখন জেগে উঠেছে জাগ্রত মানুষকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিচ্ছে। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা দাবি আদায়ে লড়াই করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। সংলাপও চলতে হবে। সংলাপ হোক না হোক, আন্দোলন হবে।

সর্বশেষ খবর