রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোটি টাকায় কেনা কষ্ট

মির্জা মেহেদী তমাল

কোটি টাকায় কেনা কষ্ট

সবজি রপ্তানির ব্যবসা করেন ভুক্তভোগী আহাদুল ইসলাম। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ হাসান ইমাম বিদ্যুৎ তার বাসায় যান। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীকে পশ্চিম ধানমন্ডিতে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথাও জানান। পরে ওই বছরের ৯ নভেম্বর ফ্ল্যাটের দাম হিসেবে বিদ্যুেক নগদ ৪৫ লাখ টাকা দেন ব্যবসায়ী। প্রাপ্তিস্বীকার করে তাকে ডেভেলপার (ফ্ল্যাট নির্মাতা) প্রতিষ্ঠান ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি জাল রসিদ দেন বিদ্যুৎ। কয়েকদিন পর বিদ্যুতের সহায়তায় আহাদুল ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা আইএফআইসি ব্যাংকের ধোলাইখাল শাখায় ফ্ল্যাট কেনার ঋণের জন্য আবেদন করেন। প্রয়োজনীয় তদবির করে কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই ৭৫ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করান বিদ্যুৎ ও তার সহযোগীরা।

বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী আহাদুলকে জানান, ঋণের কয়েকটি কিস্তি পরিশোধের পর নামজারি শেষে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে তাকে। কিন্তু ঋণের ১৩ কিস্তি পরিশোধের পরও ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয় না ব্যবসায়ীকে। একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, নানারকম জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের অর্থ পুরোটাই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক বিদ্যুৎ ও তার সহযোগীরা। সেইসঙ্গে গেছে আগে দেওয়া টাকাও। সারা জীবনের উপার্জিত অর্থ হারিয়ে কষ্টে জীবন কাটে তাদের। এ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঋণদাতা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল প্রতারক চক্র। চক্রের সদস্য আসাদুল হক রিজু অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিল আমিন কোর্ট শাখায় ড্রিম ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার আবুল হাসেম সেজে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এর আগে ড্রিম ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা লস্কর কবিরের সহায়তায় আবুল হাসেমের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করেন প্রতারকরা। সেসবের সঙ্গে আসাদুল হক রিজুর ছবি যুক্ত করে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অন্য দুই পরিচালক আবুল হাসেমের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার ডলির জাল পরিচয়পত্র ও ছেলে মাহাদী হাসান মীমের নামে জাল পাসপোর্ট তৈরি করে কোম্পানির জাল প্যাড ও টিআইএন সনদ, জাল ট্রেড লাইসেন্স, জাল মেমোরেন্ডাম অব আর্টিক্যালস অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হয়। এর সবই প্রতারণার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহূত হয়। ঋণের কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা আদাবর, ঢাকা উল্লেখ করা হলেও সেখানে তাদের কোনো কার্যালয় নেই। চক্রের আরেক সদস্য খায়রুজ্জামান তুহিন নিজেকে আল রাসেল টেক্সটাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় দিয়ে আগেই একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। পরে রিজু যখন আবুল হাসেম সেজে ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলতে যান, তখন তুহিন তাকে ‘পরিচিত’ হিসেবে শনাক্ত করেন। পাশাপাশি ওই হিসাবে কোনো অবৈধ বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেন হলে তার ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে ব্যাংককে চিঠিও দেন তুহিন। ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই ওই হিসাব নম্বরে ঋণের ৭৫ লাখ টাকা জমা হলে আবুল হাসেমের জাল স্বাক্ষরযুক্ত চেক দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তা তুলে নেওয়া হয়। এদিকে প্রতারক চক্রের হোতা হিসেবে চিহ্নিত সৈয়দ হাসান ইমাম বিদ্যুতের প্রকৃত নাম খন্দকার হাসান ইমাম বলে জানা গেছে। তবে তার বা সহযোগীদের কারও বর্তমান ঠিকানা জানা যায়নি। বিদ্যুৎ ও তুহিনের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। আসাদুল হক রিজুর মোবাইল ফোন নম্বর সচল থাকলেও কল রিসিভ করেননি তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর