বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নকল প্রেম

মির্জা মেহেদী তমাল

নকল প্রেম

আবদুল মালেক এবং তার স্ত্রী রাশেদা বেগম মিনু। তারা ৪২৮, উত্তর ইব্রাহিমপুর (বর্ণমালা সড়ক) নিচতলায় ভাড়া বাসায় থাকত। কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রবাসী জিয়াউল হকের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব এবং পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে মিনু। সম্পর্কের এক পর্যায়ে বেড়ানোর কথা বলে নিজ বাসায় ডেকে আনে। পরিকল্পনা মতে, তাদের অন্য সঙ্গীরা আকস্মিকভাবে বাসায় প্রবেশ করে নিজেদেরকে পুলিশ, সাংবাদিক, এলাকার বড় ভাই পরিচয় দিয়ে জিয়াউল হককে আক্রমণ করে এবং জোরপূর্বক শিরিন আক্তার মৌয়ের সঙ্গে তার আপত্তিকর ছবি তোলে। ছবিগুলো পত্রিকায় প্রকাশ এবং তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে জিয়াউল হককে মারধর করে তার কাছে থাকা নগদ ৩২ হাজার ২০০ টাকা, ৩৩ ডলার এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া প্রবাসীকে খুন করা হবে এমন ভয় দেখিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে  তার আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে। পরে তার পরিবারের সদস্যরা র‌্যাবের সহযোগিতা চাইলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সেখানে অভিযান চালায়। এরা এর আগেও অন্য আরও প্রবাসীর সঙ্গে এমন প্রতারণা ও মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। চট্টগ্রাম নগরীর একটি স্কুলের শিক্ষিকার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় তারেকুল ইসলামের। ফেসবুকে নিয়মিত চ্যাট হতো তাদের। তারেকুল নিজেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে ঝামেলায় পড়ে গেছেন জানিয়ে টাকা ধার চান ওই শিক্ষিকার কাছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রথম দফায় ৩০ হাজার টাকা দেন ওই নারী। পরে আবারও তিনি নেন ২০ হাজার টাকা। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন তারেক। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার এক পরিচিতকে ফোন করেন ওই শিক্ষিকা। টাকা ফেরত না দিলে বিষয়টি পুলিশকে জানাবেন বলেও হুমকি দেন তিনি। এতে ক্ষেপে যান তারেক। এরপর তিনি অপহরণের পরিকল্পনা করেন। চট্টগ্রামে এসে ওই শিক্ষিকাকে ফোন দেন তারেক। পাওনা টাকা নিতে তাকে দেখা করতে আসতে বলেন তিনি। ওই শিক্ষিকা স্কুলের ক্লাস শেষে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে গাড়িতে তোলেন তারেক। ওই গাড়িতে করেই মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর। এরপর ওই শিক্ষিকার স্বামীর কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ জানায়, ওই শিক্ষিকাকে অপহরণ করে যশোর নিয়ে যায় তারেক। যশোরের একটি হোটেল থেকে তারেককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর যশোরের কোতোয়ালি থানার মাইকপট্টি কেশবলাল রোডের হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল থেকে ওই শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তারেক পেশাদার প্রতারক। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে তার একাধিক আইডি রয়েছে। এসব আইডি থেকে নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তারেক। এলাকায় তার ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। সারা দেশেই এমন মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরিচিত লোকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মহিলাদের দিয়ে আকর্ষণীয় কথা বলিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতারক চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বন্ধুত্বের উছিলায় প্রতারক চক্রের মহিলাদের দেওয়া বাসার ঠিকানায় আসত জনৈক ব্যক্তিরা। ফাঁদে পা দিয়ে বন্ধু হয়ে উঠে শত্রু অর্থাৎ তাদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে তাদের মারধর করত। এমনকি প্রতারক মহিলাদের সঙ্গে অশ্লীল ভঙ্গিতে মোবাইলে ছবি তোলে ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। বেশ কিছুদিন ধরে এমনই ঘটনা ঘটাচ্ছিল চক্রটি। কিন্তু বিধিবাম! প্রতারণার তথ্য পুলিশের কাছে আসার পরই এই চক্রের পাঁচজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। পাঁচলাইশ থানা এলাকার ২৭৫ মুকবুল সওদাগর লেইনের রহমান ম্যানশনের ৩য় তলার ১৪ নম্বর বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো— ফাতেমা বেগম (২৮), মমতাজ আক্তার ওরফে রিসতা (১৮), মোছা. সাথী আক্তার (১৮), মোছা. হাজেরা বেগম (৩৪) ও মো. রফিকুল ইসলাম (৩৪)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর