বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাটোরে হামলায় আহত বিএনপির প্রার্থী সাবিনা

সংঘর্ষ ভাঙচুর অব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

নাটোরে হামলায় আহত বিএনপির প্রার্থী সাবিনা

ভোটের বাকি ৯ দিন। ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দল-মতের প্রার্থীরা এখনো আটঘাট বেঁধে প্রচারণায় নামতে পারেননি বলে অভিযোগ। কোথাও কোথাও নামলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বাধায় সভা-সমাবেশ কর্মসূচি পণ্ড হচ্ছে। গতকালও অন্তত ১০ জেলায় বাধা ও ধানের শীষের পক্ষের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু  মোল্লাকে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রাজধানীতে ধানের শীষের দুই প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ ও আবদুল মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এখনো লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হয়নি। গতকাল নাটোর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির গাড়িতে হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীতে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নিজেদের বাসভবনে পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে আসা-যাওয়া এবং কাজকর্ম করতে পারছেন না। প্রচারে নামলে প্রায় প্রতিদিনই হামলা হচ্ছে, পোস্টার লাগালে ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাঙচুরসহ নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। ধানের শীষের কোনো কোনো প্রার্থী নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রাজধানীর ১৫টি আসনের মধ্যে এখনো জোরালো কোনো প্রচারে নামতে পারেননি অধিকাংশ ধানের শীষের প্রার্থী। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১০ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার আসনে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর সাত-আটটি মামলাসহ শতাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদিনই বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। এ পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠিতে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছি। ১৬ ডিসেম্বর প্রচারণায় বাধা দেওয়া, মাইক ভাঙচুর ও মারধরের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয়। এ সময় অনুলিপি দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের সচিবকে। নিজে নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে সরাসরি অভিযোগ করলেও এখনো পর্যন্ত কমিশন গ্রেফতার বন্ধ ও তাদের প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের অস্থিমজ্জা নেই মন্তব্য করে মান্নান বলেন, ‘আপনারা যে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, সে দায়িত্ব নিলেন কেন?’ এদিকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রাজধানীর শ্যামপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেভাবে আমার বাড়ির সামনে পুলিশি হয়রানি চলছে, তাতে আমি ও আমার পরিবার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যেখানে আমাদের নিরাপত্তাই নেই, সেখানে নেতা-কর্মীদের কী অবস্থা, বুঝুন।  তফসিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমার নির্বাচনী এলাকায় শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার শ্যামপুরের বাসভবনটি নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রধান অফিস হিসেবে ব্যবহার করছি। অফিসে আমার নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে আসা-যাওয়া ও কাজকর্ম করতে পারছে না। প্রায়ই পুলিশ সেখানে চড়াও হয়, আমাদের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখায়। আমি প্রার্থী হিসেবে ৯০টি ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমার ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন ৭৮টি মামলা কাঁধে নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছি।’ এ দিকে পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, সাধারণ মানুষকে নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন ঢাকা-১১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম। ভোটডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যেন পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে না পারে সে জন্য প্রস্তুত থাকতে বাড্ডা, ভাটারা, হাতির ঝিল ও রামপুরাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বাড্ডার আদর্শনগর ও মোল্লাপাড়ায় গণসংযোগ করার সময় শামীম আরা এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ভোট ও দোয়া চান। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলেন তিনি। ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি পার্থী আহসান উল্লাহ হাসান সাংবাদিকদের বলেন,  মামলার কারণে এখনো তিনি প্রচারণায় নামতে পারেননি। তবে তার নেতা-কর্মীরা গণসংযোগে নামলেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর তার স্ত্রী রিনা হাসান লিফলেট বিতরণ করার সময় ঘেরাও করে প্রতিপক্ষ। তারপর মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে পল্লবী থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। অসুস্থতার কারণে পরে রিনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল সব মামলায় জামিন হয়েছে জানিয়ে হাসান বলেন, সার্টিফায়েড কপি পেলে দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রচারণায় নামবেন তিনি। এদিকে বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় গণসংযোগ করেন ঢাকা-১১ আসনের বিএনপির প্রার্থী শামীম আরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রচার-প্রচারণা চালাতে হচ্ছে উল্লেখ করে  প্রতিটি স্থানেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। দুপুর থেকে গণসংযোগ করেছেন ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তিনি বসুন্ধরা গেট, আবাসিক এলাকা ও কাঁচাবাজার এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি, জেএসডিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। ফরিদপুর : ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের চকবাজার চালপট্টির সামনে সাপ্তাহিক হাটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর কামাল ইউসুফ চাঁদপুর ইউনিয়নে পূর্বনির্ধারিত একটি নির্বাচনী সভার কার্যক্রম স্থগিত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কামাল ইবনে ইউসুফ শহরের চকবাজারে গণসংযোগ করছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি চকবাজারে সাপ্তাহিক হাটের দোকানি ও ক্রেতাদের কাছে গণসংযোগে যান। এ সময় হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ২০ জনের মতো যুবক কামাল ইবনে ইউসুফের গণসংযোগে হামলা চালায়। ওই যুবকরা অতর্কিতে কামাল ইউসুফের সঙ্গে থাকা শহর বিএনপির সহ-সভাপতি লিয়াকত হোসেন লাবলুকে (৬০) হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে। এ সময় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলায় পাঁচজন আহত হন। পরে লিয়াকত হোসেন লাবলুকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বরিশাল : বরিশাল-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন অভিযোগ করেন, গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি জাকির হোসেন, মহিলা দলের নেত্রী তাসলিমা পারভিন, যুবনেতা মাসুম, কারাবন্দী ইউপি চেয়ারম্যান তাইফুর রহমান কচি, বিএনপি নেতা জি এম খলিল লাল, আকবর হোসেন মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সিইসি লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। আমার গণসংযোগে যেসব নেতা-কর্মী অংশ নিচ্ছেন, তাদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যত অত্যাচার-নির্যাতনই হোক না কেন. আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।’ এদিকে বরিশাল-২ আসনের উজিরপুরে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৬৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে উজিরপুর থানায় মামলাটি করেন। সোমবার বেলা ১টার দিকে বড়াকোঠা ইউনিয়নের ডাবেরকূল বাজার চৌরাস্তা এলাকায় ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সৈয়দ আহসানুল হক কবির হাসানসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ২৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়। কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও বরিশাল-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধনে পুলিশ গণগ্রেফতার চালাচ্ছে। তিনি গণগ্রেফতার বন্ধসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। নাটোর : নাটোরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে হামলা করেছে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি হাতে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত জখম হন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার ত্রিমোহনী ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাটোর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি গতকাল বেলা ১২টার দিকে নাটোর শহরের বাসা থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন। পরে দুলুর গ্রামের বাড়ি নলডাঙ্গায় যাওয়ার পথে ত্রিমোহনী ব্রিজ এলাকায় ছবি ভোটারদের উদ্দেশে গাড়ি থেকে হাত নেড়ে ভোট প্রার্থনা করছিলেন। এ সময় ৮-১০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী তার গাড়িবহরে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে ছবি রক্তাক্ত জখম হয়ে হাতে আঘাত পান। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে বিএনপি প্রার্থী ছবিকে চিকিৎসা নিতে হয়। এ সময় সাবিনা ইয়াসমিন ছবি অভিযোগ করে বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল তাকে নির্বিঘ্নে প্রচারণার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, তার স্বামীর জন্মস্থানে তিনি আসতে পারবে না এ হতে পারে না। তিনি তার জীবনের নিরাপত্তার দাবি করেছেন। কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরূপ কুমার গোস্বামী এ আদেশ দেন। রেজা আহমেদ বাচ্চু এ আসনের সাবেক এমপি এবং দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি। দলীয় সূত্র জানায়, রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা একটি নাশকতার মামলায় কিছুদিন আগে হাই কোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পান। এ মামলায় স্থায়ী জামিন পেতে তিনি গতকাল কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে বাচ্চুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে ওই মামলার অন্য আসামিদের এ সময় স্থায়ী জামিন দেন আদালত। মাগুরা : মাগুরা-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী নানা অভিযোগে মাগুরা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। লিখিত বক্তব্যে নিতাই রায় অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীরেন শিকদারের নেতা-কর্মীরা মহম্মদপুরের পলাশবাড়িয়া, বিনোদপুর, বনগ্রামসহ অন্তত ১০টি এলাকায় তাদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিএনপি ও জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ শালিখার সীমাখালীতে নিজেদের নির্বাচনী অফিসে নিজেরাই হামলা করে বোমা ফাটিয়ে শালিখা উপজেলা বিএনপি সম্পাদক মিল্টন মুন্সীসহ ৬৫ জনের নামে মামলা দিয়েছে। একই ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়েছে মহম্মদপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে। বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে জেলা রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন ও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির দাবি জানিয়েছেন। জামালপুর : জামালপুর-৫ (সদর) আসনে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। গতকাল শহরের সরদারপাড়ার ব্যক্তিগত অফিসে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সকালে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা শহরের হাটচন্দ্রা এলাকায় এবং রাতে রশিদপুরে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে। এ ছাড়া দিগপাইত ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। চাঁদপুর : চাঁদপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও গণসংযোগে ব্যস্ত থাকলেও বিএনপি প্রার্থী গণসংযোগ দূরের কথা, তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ।

বগুড়া : বগুড়া-৬ সদর আসনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদের পথসভায় বাধা দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সন্ধ্যার পর শহরের সাতমাথায় পথসভা শুরু করলে কয়েকজন যুবক এসে সমাবেশের জন্য নিয়ে রাখা মাইক, তার, ব্যাটারি, মাইক্রোফোন, ব্যানার ও হ্যান্ডবিল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দিতে গলে দুর্বৃত্তরা কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শ্যামল কবিরাজ জানান, বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষ করে শহরের সাতমাথায় তাদের দলীয় প্রার্থী কাস্তে মার্কার আমিনুল ফরিদ সমাবেশ শুরু করা মাত্র সরকারদলীয় লোকজন এসে সমাবেশের প্রয়োজনীয় সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তারা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আসলাম শেখকে লাঞ্ছিত করে।

রাজশাহী : গণসংযোগে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির প্রার্থী আবু হেনা নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলার গোয়ালকান্দি বাজারে গণসংযোগে যান। এ সময় সেখানে ঝাঁটা হাতে নারীরা তার পথ রোধ করেন। শেরপুর : জেলার সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়নের বাগবাড়ী বাজার এলাকায় গতকাল ভোরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে বিকালে শহরের চকবাজারের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ ও মহাজোটের এমপি প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা বাগবাড়ীর নির্বাচনী অফিসটিতে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল। গতকাল ভোরে একদল দুর্বৃত্ত অফিসটি ভাঙচুর করে। আতিকের অভিযোগ করে বলেন, সদর উপজেলায় বিএনপি একজন অর্বাচীন বাচ্চা মেয়েকে মনোনয়ন দিয়েছে। মেহেরপুর : জেলার গাংনী থানা পুলিশ গতকাল ভোরে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৯ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। আটকদের কাছ থেকে দুটি ওয়ান শুটারগান, চার রাউন্ড গুলি, এক কেজি গান পাউডার, তিনটি রামদা, একটি ছুরি ও কিছু বাঁশের লাঠি উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে গাংনী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে একটি, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ১৪৫ জনকে আসামি করে  মামলা করা হয়েছে। তবে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের বিএনপির প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার সমর্থিত নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি রাতভর অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি আটক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ায় বিএনপি ও শিবিরের আট নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল ভোররাত ও দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিতে তাদের আটক করে। এ সময় সাতটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল জব্বার, জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাসুদ রানা, জামায়াত কর্মী শরিফুল ইসলাম, শাহিন আলম, রাশেল রানা, রাহুল রানা, আলহাজ আলী ও আলমগীর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোজাম্মেল হককে আটক করেছে পুলিশ। তিনি ইউনিয়ন জামায়াতের নায়েবে আমির। গতকাল উপজেলার হাজারবিঘি বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে সোমবার থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১১ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হচ্ছেন যুবদল নেতা হারুন মিয়া, শ্রমিক দল নেতা লালন শাহ, এনাম আহমেদ, জামায়াত নেতা সালেক মিয়া, বিএনপি নেতা হান্নান চৌধুরী, জামায়াত নেতা আতিকুল ইসলাম সোহাগ, বিএনপি নেতা ফারুক মিয়া, বিএনপি কর্মী ছালেক মিয়া, ছাত্রদল নেতা মীর হোসেন ও হারিছ চৌধুরী এবং ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ।

পিরোজপুর : জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস শাহীনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুল এবং সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কারণে জুলহাস শাহীনকে পদ ও দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর