রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রার্থীশূন্য আসনে পুনঃতফসিল চেয়ে ইসিতে বিএনপি

নির্বাচনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই —নজরুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়া বিএনপির প্রার্থীদের আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ চেয়ে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ দাবি করেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১ আগস্ট তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে। নিবন্ধন বাতিল হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলের নেতারা এবার তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কয়েকজন। ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, এবারের নির্বাচনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই। তারা শুধু ধানের শীষের প্রতীক নয়, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেওয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি, বিএনপি মনোনীত করেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াত নেতাদের পদ-পদবি তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে পদ-পদবি থাকুক। আপনি যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি। কোন ওয়েবসাইটে আপনার নাম কীভাবে আছে সেটা পরের ব্যাপার। আমরা আইনের মাধ্যমে দিতে পারি কিনা সেটা হলো বিষয়। জামায়াত কোনো নিবন্ধিত দল নয়। জামায়াত নেতাদের তালিকা তাদের কাছে নেই উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তারা আমাদের দলের প্রতীক ধানের শীষ পেয়েছে, এটা যদি অবৈধ হতো তাহলে নির্বাচন কমিশন আগেই বলত তাদের প্রার্থিতা অবৈধ। তাদের যদি প্রতীক দেওয়া বেআইনি হতো, যখন প্রতীক বরাদ্দ করা হয় তখন নির্বাচন কমিশন কেন প্রতীক বরাদ্দ করল? আওয়ামী লীগ সবসময় বলে নির্বাচন কমিশন যা করে তাই আমরা মেনে নেব, বাধা সৃষ্টি করব না। এখন কেন আওয়ামী লীগ ইসির কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে? ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের ২৫ নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেয়। জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নিতে ওই চার রিটকারী নির্বাচন কমিশনে যে আবেদন করেছিলেন, তা তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয় ওই আদেশে। জামায়াতের এসব প্রার্থী ভোটে থাকবেন কিনা আগামী সোমবারের মধ্যে সে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ইসির। জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি ইসিতে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আদালত এ পর্যন্ত ১২/১৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব আসনের নির্বাচন স্থগিত রেখে আবার নির্বাচনের দাবি করছি অথবা এসব আসনে আমাদের প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতার বৈধতা দেওয়ার কারণেই তাদের আমরা মনোনীত করেছি। কমিশন যদি সে সময় অবৈধ ঘোষণা করত আমরা অন্য প্রার্থী দিতাম। সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি, হামলা, ধরপাকড়, মামলা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একদিকে পরিকল্পিতভাবে আদালত কর্তৃক প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা নির্বাচন করার আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। কিন্তু একই নির্বাচনী এলাকায় একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেতা ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান) ঋণ খেলাপি হলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি। গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত অধিকার। আর গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। সেই নির্বাচন যদি এভাবে প্রহসনে পরিণত হয়, হাস্যকর করা হয়- তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। নির্বাচনকালে ইসি অসীম ক্ষমতার অধিকারী হলেও তারা কেন সে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। নিশ্চয় জনগণ সেটা জানতে চাইবে। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি আমাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেওয়া হোক। কারণ এটা আমাদের মৌলিক অধিকার। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সরকার দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাদের ভিসা না দিলে তারা কীভাবে আসবেন? কারণ সরকার নির্বাচনের নামে যে কাজটি করতে চাচ্ছে সেটি হলো চুরিচামারি। তাদের কাজে বাধা হতে পারেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ কারণেই তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দিতে চাচ্ছে না। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, বিজনকান্তি সরকার, দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর