মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে

বিকল্পধারার ইশতেহারে ‘আগামী দিনের সনদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ইশতেহার ‘আগামী দিনের সনদ’ ঘোষণা করেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। দলটি এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য করলেও বিকল্পধারার কয়েকজন প্রার্থী মহাজোটের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং দলীয় প্রতীক কুলা নিয়েও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিকল্পধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ‘একটি শান্তি-সুখের বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দলটি মোট আটটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে তাদের ইশতেহার তৈরি করেছে। আর বিকল্পধারা ‘উন্নয়ন হোক তোমার হৃৎপিণ্ড, গণতন্ত্র হোক তোমার আত্মা- জেগে ওঠো দুর্বার বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগানে এর ইশতেহার প্রণয়ন করে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, এই প্রথমবার একটি দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যোগ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। আমাদের আহ্বান— এই নির্বাচন যাতে শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন তথা রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করবে। বিকল্পধারার ইশতেহারে সমাজ পরিবর্তনমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে সংসদে জোর দাবি জানাব। ইশতেহার প্রকাশ-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী বলেন, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন নির্বাচন নিয়ে নির্বিচার মিথ্যা কথা বলছেন। এ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও যুক্তফ্রন্টের অন্য নেতৃবৃন্দ। ইশতেহার তুলে ধরা হলো—

আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক সংস্কার : সংসদকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর, সংসদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, প্রাদেশিক সরকার ও আইনসভা গঠন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভারসাম্য সৃষ্টি করার বিষয়ে সংসদে আলোচনা, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সংসদে আলোচনা। সংবিধানে ন্যায়পালের পদটি গঠন ও কার্যকর, সামাজিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন। পুলিশ ও অন্যান্য শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বিশেষ কর্মসূচি প্রণয়ন।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি : গ্রামীণ শিল্পোন্নয়ন ও অন্যান্য কার্যকর অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ। সব জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা। শ্রম আইন সংস্কার এবং বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সুবিধা বৃদ্ধি করা। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যথাযথ আইন প্রণয়ন এবং সড়কের সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ। ব্যাংকিং কমিশন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও ব্যাংকিং খাতে সংস্কার সাধন। একটি ‘যুব কমিশন’ গঠন ও যুব প্রতিনিধিদের দ্বারা ভবিষ্যতে যুবশক্তির উন্নয়ন এবং যুবস্বপ্নের বাস্তবায়ন। মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সুযোগ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজে ও সরকারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সক্ষম প্রতিবন্ধীদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় চাকরি সংরক্ষণ করা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিকরণ এবং অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছরে উন্নীতকরণ। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চালু রাখা। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও নিশ্চিতকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরাঞ্চল, নদীভাঙা এবং চরাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ। নারীদের আর্থিক উন্নয়নে পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা। সব ধর্মীয় ও অনুভূতির প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশ সৃষ্টি। জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চালু রাখার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সব ধরনের সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য নাগরিক প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণে হয়রানি বন্ধকরণ এবং সেবা নিশ্চিতকরণ। দ্রব্যমূল্য ও সরকারি বিলসমূহ সহনশীল পর্যায়ে রাখা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা, যেমন পাট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র সমবায় ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট শ্রমিক এবং মোবাইল ব্যাংকিং ও রিচার্জ ব্যবসায়ীদের আর্থিক উন্নয়ন স্বার্থে পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা।

কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়ন : বাস্তবমুখী কৃষকবান্ধব নীতি ও আইনের প্রবর্তন। কৃষিপণ্যের উৎপাদনে সরকারি সহায়তা, ভর্তুকি ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। পৃথক ‘পাট মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় মাথাপিছু আয়ের নিচে যাদের অবস্থান থাকবে সেসব কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের ৬০ বছর বয়সের পর থেকে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকারি পেনশনের ব্যবস্থাকরণ।

শিক্ষাব্যবস্থা : গ্রাম ও শহরের শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্য তথা বৈষম্য দূরীকরণ। প্রশ্ন ফাঁসসহ শিক্ষার সব দুর্নীতি দমন। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি জেলায় একটি করে ডিস্ট্রিক্ট লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিকরণ ও উচ্চতম মানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তৈরিতে উন্নত প্রশিক্ষণ। এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়া সহজীকরণ। বেসরকারি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয় সাধন ও মান নিয়ন্ত্রণ।

গণতন্ত্র ও ভারসাম্যের রাজনীতি : ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা। জীবনের নিরাপত্তা প্রদান। মন্ত্রিসভায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ মহিলা ও ২০ শতাংশ বিশেষজ্ঞের (টেকনোক্র্যাট) জন্য সংরক্ষণ। সব মৌলিক অধিকার নির্বিঘ্নে ভোগের সুযোগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তাঙ্গনের মতো বৃহত্তর পরিসরে উন্মুক্ত সভা-সমাবেশের জন্য নির্ধারণ। বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন। শ্রমজীবী, কৃষক ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিকে বাধ্যতামূলকভাবে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে হবে।

পরিবেশ : জলবায়ু ও পরিবেশের প্রতি সারা বিশ্বে যে হুমকি দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ সে হুমকির বাইরে নয়। সেজন্য এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে।

নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা : আধুনিক, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক দক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করা। মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার অব্যাহত রাখা। সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতি : প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালীকরণ। পশ্চিমা দেশসমূহের সঙ্গে আরও দৃঢ়তর সম্পর্ক স্থাপন। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সার্ক ও বিমসটেকের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। ওআইসি ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিকটতর করা। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একাত্মতা ও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা। জাতিসংঘের নীতি ও চার্টারের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস ও আস্থা জ্ঞাপন করা। পণ্য রপ্তানিকরণ এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কূটনীতি দৃঢ়ীকরণ। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ। ভিন্ন ভিন্ন দেশের সঙ্গে সড়ক, রেল, নদী ও আকাশপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনব্যবস্থা বৃদ্ধি করা।

সর্বশেষ খবর