বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের উত্তেজনা সারা দেশে

নৌকার প্রচারণায় পেট্রলবোমা চট্টগ্রামে নারায়ণগঞ্জে আগুন

কেরানীগঞ্জে হামলায় গয়েশ্বর আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালও হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন বেশি। চট্টগ্রাম ও নাটোরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও নীলফামারীতে নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক। অন্যদিকে ঢাকায় হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ ছাড়া দেশের  বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশি হয়রানিসহ সরকারদলীয় সমর্থকদের হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেছেন। তবে এদিন ধানের শীষের জামায়াতের প্রার্থী ও আরেক জামায়াতের প্রার্থীর স্ত্রী-কন্যাসহ শতাধিক বিএনপি-জামায়াত কর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের তথ্যানুসারে, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ) আসনে সীতাকু  ভাটিয়ারী ইউপির জাহানারাবাদে মহাজোটের প্রার্থী দিদারুল আলমের গণসংযোগে ‘পেট্রলবোমা’ হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারী ইউপির জাহানারাবাদ ২ নম্বর ওয়ার্ডে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আজম জসিম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাটিয়ারী ইউপির মেম্বার সহিদুল ইসলাম শাহেদের নেতৃত্বে নৌকার গণসংযোগ চলছিল। একই সময় ধানের শীষের নেতা-কমীরাও গণসংযোগে ছিল। হঠাৎ করে নৌকার গণসংযোগকারীদের ওপর জামায়াত-বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কয়েকটি পেট্রলবোমা ও হাত বোমা ছুড়ে মারে। এ সময় আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- সহিদুল ইসলাম শাহেদ মেম্বার, যুবলীগ নেতা নূর উদ্দিন, সাদ্দাম, তৈয়ব, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবু সালেক, তমলিম। তাদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ সাদ্দাম, সাহেদ মেম্বার, নূর উদ্দিনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক সিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নাটোরের বড়াইগ্রামে গতকাল সকাল ১১টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ তুলে হামলা চালায় স্থানীয় শতাধিক বিএনপি-জামায়েত নেতা-কর্মীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ও টহলরত বিজিপি সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর ওই এলাকায় বিজিপি সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়হান জানান, পূর্ব পরিকল্পনা মতে জামায়াত-বিএনপির নেতা সেলিম, আলম, মোস্তফা, নাসির, সোহাগ, মান্নান, হযরত সহ অনেকেই প্রকাশ্যে এই হামলার নেতৃত্ব দেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল কাদের জানান, সবস্থানেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। একইভাবে মেরিগাছা বাজারে পোস্টার ছেঁড়ার সময় এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ফতুল্লা উপজেলার পাগলা মধ্য রসুলপুর এলাকায় সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রার্থী শামীম ওসমানের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে এ ঘটনায় ক্যাম্পে থাকা চেয়ার টেবিল ও পোস্টার পুড়ে যায়। আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে ফতুল্লা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর বাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ও নির্বাচন অফিসে গত সোমবার রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি পরষ্পরকে দোষারোপ করেছে। তবে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পার্শ্ববর্তী মানিকাচর হাইস্কুল মাঠে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পূর্ব ঘোষিত নির্বাচনী জনসভার অনুমতি বাতিল করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মেঘনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা পারভীন বলেন, বিএনপির জনসভার জন্য মানিকারচর হাইস্কুল মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেই মানিকারচর মাঠের পার্শ্বে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অদূরে মহেষখোলা হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশের ঘোষণা ছিল। একই দিনে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে দুটি স্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকায় আমরা বিএনপির সমাবেশের অনুমতি বাতিল করেছি। মেঘনা থানা অফিসার ইনচার্জ আবদুল মজিদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় মানিকারচর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ঝালকাঠির রাজাপুরে আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতরাত আড়াইটার দিকে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চারাখালী গ্রামের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে একই রাতে একই উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের বড়ইয়া গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী আকবর তালুকদারের ঘরেও দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। তবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। নীলফামারী-২ (সদর) আসনের রামনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরচরাবাড়ী মোদোর মোড় বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জামায়াত-শিবিরের তিন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোমিনুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুনের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঢাকায় গয়েশ্বরের ওপর হামলা, অন্যদেরকে বাধা : ঢাকা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বিকালে কেরানীগঞ্জের কদমতলীর জিনজিরা এলাকায় তার ওপর এই হামলা করে। মাথায় আঘাত পেয়ে গয়েশ্বর রায় কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর রক্তমাখা পাঞ্জাবি পরেই গত রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক চলছিল। গয়েশ্বরের মাথার বেশ কয়েকটি স্থানে ব্যান্ডেজ ছিল। দলের নেতা-কর্মীরা তাকে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। এদিকে ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিকালে সিদ্দিকবাজার এলাকায় সুব্রত চৌধুরীর মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সুব্রত চৌধুরীকে সেখানে বেশ কিছু সময় অবরুদ্ধ করেও রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিনের বাসার সামনে দিনভর পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে সালাউদ্দিন সমর্থক ও মহাজোটের প্রার্থী বাবলা সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সাড়ে ১১টার দিকে মহাজোট প্রার্থীর আবু হোসেন বাবলার সমর্থকরা সালাহউদ্দিনের বাসার সামনে এসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে অনীহা এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে নিষেধ করায় প্রচারণা চালাতে পারেননি ঢাকা-৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। গতকাল দুপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সবুজবাগ থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা নিরাপত্তা প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে নিষেধ করা হয়। এ জন্য নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক সাজু গতকাল তার নির্বাচনী এলাকার দারুস সালাম ও কল্যাণপুরে দুই দফা গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ, কোথাও তার পোস্টার লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না। গণসংযোগেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-১১ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শামীম আরা বেগম গতকাল উত্তর বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি সব নেতা-কর্মীর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। শামীম আরার গণসংযোগকালে ৩০-৪০ জন যুবক জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হাতে বাঁশের লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় ও তাদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত বাঁশের লাঠি জব্দ করে নিয়ে যায়। ঢাকা-৫ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী সকাল সাড়ে ১০টায় ডেমরার বামৈল বাজার থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি দেখা গেছে।

ভালুকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ : ময়মনসিংহ-১১ আসনের বিএনপি মনোনীত ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু স্থানীয় পাইলট স্কুল মোড় থেকে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বিএনপি নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে বাসট্যান্ড এলাকা এলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পার্কিং করা প্রায় শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও ৬২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ৪ পুলিশ, ৪ সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।

হয়রানির অভিযোগ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের : চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবু নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, তার আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় ধারাবাহিকভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মতো আচরণ করছে। গণগ্রেফতারের পাশাপাশি প্রতিদিনই মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) ও টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের বিএনপির প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে হামলা-মামলা, হয়রানি এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরকারদলীয় লোকজন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। সকালে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এ অভিযোগ করেন। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বিএনপি প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানের অভিযোগ, সোমবার বিকালে সদর উপজেলার আনেহুলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। জনসভার আগেই স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ৫০-৬০ জন হামলা চালায়। এ সময় তারা জনসভার মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে জনসভা প  করে দেয়। গত কয়েক দিনে একাধিক গায়েবি মামলায় বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতাউর রহমান খানের ছেলে ও টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তিসহ অন্যান্য ফেরারি আসামিরা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধর ও সাধারণ ভোটারদের হুমকি প্রদর্শন করছেন। এ ছাড়াও গত কয়েক দিনে তার নির্বাচনী এলাকায় একাধিক গায়েবি মামলায় বিএনপির অন্তত চারশ নেতা-কর্মী ঘরে থাকতে পারছে না। বগুড়া-৫ আসনের বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাকে তার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের গণসংযোগ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদার হামলা, ভাঙচুর, পুলিশের হয়রানি, গণগ্রেফতার ও নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারদলীয় লোকজন ও পুলিশের হামলা মামলার কারণে প্রচারণায় বের হতে পারছেন না কর্মী-সমর্থকরা। সোমবার সন্ধ্যায় অতর্কিত হামলায় তার ৫ কর্মী আহত ও ২৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে প্রচার-প্রচারণায় হামলার প্রতিবাদ ও ৭ দফা দাবি করেছেন। মেঘনাঘাট এলাকায় নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তা, দুই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রত্যাহার, প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও হামলা-মামলা বন্ধ করার দাবি জানান।

শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মী আটক : সাতক্ষীরা ৪ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের সাতক্ষীরা জেলা কারাগার এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়। আটকরা হলেন নজরুলের স্ত্রী মাকসুদা খানম ও মেয়ে শারমিন সুলতানা খুকু। গাজী নজরুল ইসলাম কারাগারে আটক রয়েছেন। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াত নেতা আবদুল আলীমের শতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। যশোর-৩ (সদর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি গোলাম রেজা দুলু, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নুরুন্নবীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে গণসংযোগে যাওয়ার পথে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ ওই তিন নেতাকে নামিয়ে নেয়। আটক অন্যজন হলেন সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি কামাল হোসেন বাবু। পরে দুপুরে শহরের রেলবাজার এলাকা থেকে পুলিশ ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলামসহ বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার একটি বাড়িতে ধানের শীষের উঠান বৈঠক থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৭৯ জন নেতা-কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ টিম। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাশকতা মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন কামারখন্দ উপজেলা জামায়াতের আমির ইউসুফ আলীসহ চার জামায়াত কর্মী, বাকিরা বিএনপি-যুবদলের কর্মী। নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম শাওয়াল, গোদাগাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক চৌধুরীকে আটক করেছে পুলিশ। নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানা পুলিশ সোমবার মধ্যরাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক ও উপজেলা ছাত্রদলের নেতাসহ তিনজনকে আটক করেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মো. হাবিবুর রহমান ও কুয়াকাটা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসীম উদ্দিন বাবুলসহ তিনজনকে আটক পরে পুলিশ। বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম হাওলাদারসহ তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। নাশকতার মামলায় ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাসুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মামলা : বরিশাল-২ আসনের বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রচারণায় হামলা এবং গুলি চালিয়ে ছাত্র ও যুবলীগের ১১ নেতা-কর্মীকে আহত করার ঘটনায় ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা তালুকদার বাদী হয়ে সান্টুকে প্রধান অভিযুক্তসহ ৪৩ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে এই মামলা করেন। ওই রাতেই থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তির মিছিলে যাওয়ায় বিএনপির ৫৩ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে নাশকতা মামলা হয়েছে বেনাপোল পোর্ট থানায়। গতরাতেই এই মামলায় বেনাপোল ও শার্শা থেকে ১৩ জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। কুমিল্লার হোমনায় গত তিন দিনে মারামারি ও নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জহিরুল হক জহর, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহসহ বিএনপির ৬৭ নেতা-কর্মীর নামে ও আরও ৬০ জন অজ্ঞাত, ১৭ জনের নামে ও আরও ৩০ জন অজ্ঞাত উল্লেখ করে হোমনা থানায় এ দুটি মামলা করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গোসাইবাড়ী বটতলা এলাকায় ধানের শীষ ও নৌকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের গাড়িবহরে হামলা ও নৌকার সমাবেশে হামলা এবং নির্বাচনী অফিসে হামলার অভিযোগ এনে পৃথক এসব মামলা হয়।

সর্বশেষ খবর