শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছিটমহল বাসিন্দারা প্রথম ভোট দেবে জাতীয় নির্বাচনে

পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ছিটমহল বাসিন্দারা প্রথম ভোট দেবে জাতীয় নির্বাচনে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৩৬ ছিটমহলের কয়েক হাজার নতুন ভোটার । প্রায় ৭০ বছর পর এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তারা স্মার্টকার্ডও পেয়ে গেছেন। ভোট নিয়ে তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চুক্তির আলোকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কাজ চূড়ান্ত হয়। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিলুপ্ত ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষ পায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। সরকারের আন্তরিকতায় শুরু হয় উন্নয়নের কাজ। ৩৬টি ছিটমহলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণসহ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বিদ্যুতের আলো। নতুন ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হন কয়েক হাজার ভোটার। এরই মধ্যে স্মার্টকার্ডও পেয়ে গেছেন তারা। দীর্ঘ ৭০ বছর পর আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দেবেন তারা। জাতীয় সংসদের এই নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। সারা দেশের মতো পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকরাও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চান। নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে আগ্রহ ও আনন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গারাতী ছিটমহলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘরবাড়ি ছিল না। পরিচয় ছিল না। এই সরকার সব দিছে। এইবার ভোটও দিবা পারিম। মোর সব আশা পূর্ণ হইছে।’ তহমিনা বেগম বলেন, ‘স্মার্টকার্ড পাইছি। ভোটের দিন সবাহে জামো ভোট দিবা। হামরা খুব খুশি।’ পঞ্চগড় জেলায় সংসদীয় আসন দুটি। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, পঞ্চগড়-১ আসনে সাতটি ছিটমহলে মোট ভোটার হয়েছেন ১ হাজার ২৫ জন । এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ৪৯৮ জন এবং পুরুষ ভোটার হয়েছেন ৫২৭ জন । পঞ্চগড়-২ আসনে ২৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মোট ভোটার ৬ হাজার ২২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৩ হাজার ২৭৫ জন । আর নারী ভোটার দুই হাজার ৯৪৫ জন। ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে মোট ভোটার ৮ হাজার ৯৩৫ জন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটার তালিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তারা আইডি কার্ড পেয়েছেন। আশা করছি তারা প্রথম উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার বিলুপ্ত ৫৯ ছিটমহলে বসবাসরত নতুন বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

আগে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেও এবারই প্রথম কোনো জাতীয় স       ংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন তারা। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে দুটি, হাতীবান্ধা উপজেলার গোঁতামারী ইউনিয়নে দুটি এবং পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, বাউরা, জগৎবেড়, জোংড়া ও কুচলিবাড়ী ইউনিয়নে ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে জনবসতি থাকা ৩৬টি ছিটমহলের নতুন ভোটাররা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। বিলুপ্ত ভোটবাড়ী ছিটমহলের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন (৫৩) বলেন, ‘শেখের বেটি আমাদের স্বাধীন, মুক্ত করে দিছে। সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দিমো। হামরা ভোট নৌকাতেই দিমো। ৬৮ বছর নিজ দেশে থেকেও পরবাসী জীবন থাকি মুক্ত করি দিছে শেখের বেটি। এখন হামরা নয়া বাংলাদেশি নাগরিক। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, স্কুলসহ সবকিছুই পাইছি।’ লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ভিতরকুটি ছিটমহলের বাসিন্দা হারুন-উর-রশিদের ভাষ্য, ‘এখন আমরা যেমন নতুন বাংলাদেশি, তেমনি নতুন ভোটারও। এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারব। এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।’

সর্বশেষ খবর