শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ দেশে টাকা বিদেশে

মির্জা মেহেদী তমাল

বিনিয়োগ দেশে টাকা বিদেশে

জার্মান নাগরিক রোজার্স। টেলিফোনে পরিচিত হন ঢাকার একজন ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে। একদিন রোজার্স ব্যাংক ম্যানেজারকে জানান, বাংলাদেশে ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তিনি। এজন্য খুব শিগগির বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে দেখা করবেন। কয়েকদিন পর রোজার্সের আরেক বন্ধু বোস্তাভো স্টিভস ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করেন। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাকে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে আসার আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ক্যামেরুনের নাগরিক ফুতসু তার জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। এরা সবাই সেই জার্মান নাগরিকের বন্ধু। এরপর তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়। কীভাবে টাকা দেশে আনা হবে এবং কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। এর মধ্যে একদিন সিঙ্গাপুর যাওয়ার নাম করে স্টিভ ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে চার হাজার ডলার ধার নেন এবং কিছুদিনের মধ্যে তা পরিশোধ করেন। বিশ্বস্ততা তৈরির পর ইউরোপে একটি কাজে স্টিভের আড়াই লাখ ইউরো লাগবে বলে জানান। বাংলাদেশে একজনের কাছে স্টিভের এ পরিমাণ ডলার আছে, তা এক্সচেঞ্জ করে ইউরো করতে হবে। এজন্য তিনি ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সাহায্য চান। ভবিষ্যতে ১১ মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট এবং অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সাহায্য করতে রাজি হন ব্যাংক কর্মকর্তা। একদিন রাতে স্টিভের কথামতো ব্যাংক কর্মকর্তা আড়াই লাখ ইউরো ম্যানেজ করে বাসায় নিয়ে যান। রাতে স্টিভ, ফুতসুসহ চক্রটি ম্যানেজারের বাসায় যায়। রাতের খাবার খাওয়ার পর ফুতসু ইচ্ছা করে একটি বোতল ভেঙে ফেলেন এবং বোতলে থাকা তরল পদার্থের কিছুটা ব্যাংক কর্মকর্তার গায়ে ফেলেন। তখন ইউরোর ব্যাগ আফ্রিকানদের সামনে রেখে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিষ্কার হতে ভিতরে চলে যান। ফিরে আসার পর আফ্রিকানরা জানান, তারা ডলার আনতে পারেননি, পরদিন লেনদেন করবেন। এই বলে তারা বেরিয়ে যান। তাদের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেন ব্যাংক কর্মকর্তা। পরদিন সকালে স্টিভকে ফোন করেন ব্যাংক কর্মকর্তা। স্টিভ জানান, তিনি ঝামেলায় আছেন। পুলিশ তাকে ফলো করছে। পরে কথা বলবেন বলে ফোন বন্ধ কওে দেন। এতে ব্যাংক কর্মকর্তার সন্দেহ হলে তিনি বাসায় থাকা ইউরোর ব্যাগ খুলে দেখেন আড়াই লাখ ইউরোর বান্ডেল আছে কিš সেগুলো ইউরো নয়, সাদা কাগজ! রাতে তিনি পরিষ্কার হওয়ার ফাঁকেই আফ্রিকানরা আড়াই লাখ ইউরোর বান্ডেল হাতিয়ে নিয়ে সাদা কাগজের বান্ডেল রেখে দেয়। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে র‌্যাবকে বিষয়টি জানালে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে উত্তরা থেকে তিন প্রতারককে আটক করে। র‌্যাব জানায়, দেশে বিনিয়োগের কথা বলে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিদেশি নাগরিকরা জড়িত। অতিলোভের কারণে এভাবে আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর