রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

৪০ হাজার কেন্দ্রের ২৫ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ

ঐক্য পরিষদের তালিকায় ৭৯ আসন সংখ্যালঘুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

মাহবুব মমতাজী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫ হাজার কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এসব ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। এদিকে ৭৯টি নির্বাচনী এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির হিসাবে, সারা দেশে অন্তত ৯৬টি নির্বাচনী এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। এসব এলাকায় তাদের ভোটার সংখ্যা ১২ থেকে ৪৯ ভাগ। নির্বাচনী এলাকাগুলোর মধ্যে ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৫৩টি অতিঝুঁকিপূর্ণ। এ তালিকা গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জমা দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিম লীর সদস্য কাজল দেবনাথ।

পুলিশের নিরাপত্তা ছকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র উল্লেখ না করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এ হিসাবে আসন্ন সংসদ জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬৪ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৩৫ শতাংশ হলো সাধারণ কেন্দ্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের সোয়া লাখ সদস্য সরাসরি মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া রিজার্ভ ফোর্স, কেন্দ্রভিত্তিক মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও কাজ করবে। পুলিশ সদর দফতরের সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের তালিকায় আজ ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা সারা দেশে ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ১৪ হাজার ৩৭২টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার এসব কেন্দ্রের মধ্যে দুর্গম এলাকায় এক হাজার ৬৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা ছকে ঢাকা বিভাগের ৯ হাজার ৮৭২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫ হাজার ৬৭৯টিই গুরুত্বপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৩৯৫ জন পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ২ হাজার ৭১১টি কেন্দ্রের এক হাজার ৭৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজশাহী বিভাগের ৫ হাজার ৯১টি কেন্দ্রের ২ হাজার ৯৭৫টি গুরুত্বপূর্ণ। রংপুর বিভাগের ৪ হাজার ৩৪৬টি কেন্দ্রের ২ হাজার ৯৮৭টি গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ হাজার ৩৮৯টি কেন্দ্রের ৪ হাজার ৪২৪টি গুরুত্বপূর্ণ। খুলনা বিভাগের ৪ হাজার ৮৩৪টি কেন্দ্রের ৩ হাজার ৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ। বরিশাল বিভাগের ২ হাজার ৫২৮টি কেন্দ্রের এক হাজার ৮২৩টি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিলেট বিভাগের ২ হাজার ৪৭৬টি কেন্দ্রের এক  হাজার ৪৯৫টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকবে। এ জন্য পুলিশের স্থানীয় ইউনিটগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

জানা যায়, ভোটকেন্দ্রগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ‘সমতল এলাকা’ ও অপরটি ‘বিশেষ এলাকা’। দুটিতেই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ হিসেবে কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রার্থী বা তার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে, আবার গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা হতে পারে কিংবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে কোনো গোষ্ঠী ভোটকেন্দ্রে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে- এমন সব কেন্দ্রকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছে। এ ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটকেন্দ্রের স্থাপনাকেও এ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ এলাকার কেন্দ্র হিসেবে দুর্গম এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যাতায়াতে সহজ হবে না-এমন এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোও রয়েছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতে, অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো- পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রানীশৈঙ্কল, দিনাজপুরের সদর, কাহারোল, বীরগঞ্জ, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও সদর, যশোরের বাঘারপাড়া, মনিরামপুর, অভয়নগর ও সদর, বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, রামপাল ও মোংলা, খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ, সাতক্ষীরার তালা, কলোরোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নেত্রকোনার বারহাট্টা ও সদর, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, ঘিওর, ও শিবালয়, রাজবাড়ীর পাংশা ও বালিয়াকান্দি, মাদারীপুরের কালকিনি ও সদর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডু ও সিটি করপোরেশনের ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো- ঠাকুরগাঁয়ের সদর, পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, খানসামা, বোচাগঞ্জ ও বিরল, নীলফামারীর সদর, ঝালকাচা ও কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাট সদর, রংপুরের গঙ্গাচরা, বাড়গাঁও এবং তাড়াগঞ্জ, কুড়িগ্রামের সদর, ফুলবাড়ী ও রাজেরহাট, জয়পুরহাটের সদর ও পাঁচবিবি, পত্নীতলা, বাদলগাচী ও মহদেবপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও তাড়াশ, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, যশোরের কেশবপুর, মাগুরার শ্রীপুর, সদর, শালিকা ও মোহাম্মদপুর, নড়াইলের কালিয়া, সদর ও লোহাগড়া, বাগেরহাটের সদর ও কচুয়া, খুলনার দীঘলিয়া, রূপসা, তেরোখাদা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, খান জাহান আলী, কয়ড়া ও পাইকগাছ, সাতক্ষীরার সদর, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝড়া, উজিরপুর ও বানারীপাড়া, ঝালকাঠির নলছিটি ও সদর, পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, কাউখালী, জিয়া নগর, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, সদর, মোহনগঞ্জ, মাদান ও খালিয়াজুরি, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামঈন ও অষ্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, সদর ও সিটি করপোরেশনের ২৩ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, নরসিংদীর পলাশ ও সদর, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী ও সদর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া, মাদারীপুরের রাজৈর ও সদর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সদর ও বিশ্বম্বরপুর, সিলেটের সদর ও সিটি করপোরেশন, মৌলভীবাজারের জুড়ি, রাজনগর ও সদর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বাহুবল, আজমিরিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সদর, লাখাই, চুনারুঘাট ও মাধবপুর, চট্টগ্রামের মিরসরাই, রাউজান, রংপুর, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পুটিয়া, কর্ণফুলী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া ও টেকনাফ।

সর্বশেষ খবর