‘এক বিঘা জমিতে পিয়াজের বীজ চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৫০/৬০ হাজার টাকা। এ জমি থেকে গড়ে বীজ পাওয়া যায় তিন থেকে চার মণ। প্রতি মণ পিয়াজের দানা (বীজ) বিক্রি হয় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এদানা চাষে কোনো মাইর নাই।’ কেন পিয়াজের দানার চাষ করছেন- জানতে চাইলে চোখে মুখে খুশির ঝিলিক তুলে এভাবেই জবাব দেন ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের চাষি আনিস শেখ। শুধু আনিস শেখই নন। ভাঙ্গা উপজেলায় দানা পিয়াজের আবাদ বরাবরই বেশি। ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে পিয়াজের দানা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় ৫৪২ হেক্টর জমিতে দানা পিয়াজের আবাদ হয়েছে। যা জেলার অন্য ৮ উপজেলার চেয়ে বেশি।
চাষিরা জানান, রং ও দামের কারণে পিয়াজের বীজকে কালো সোনা বলা হয়। পিয়াজের বীজ কালো রঙের হয় অনেকটা কালোজিরার মতো দেখতে। ভালো দাম পাওয়া গেলে এক মণ পিয়াজের দানা বিক্রি হয় এক লাখ টাকা দরে। আর দাম কম হলেও প্রতি মণ ৬০ হাজার টাকার নিচে নামে না। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এ বীজ পিয়াজ রোপণ শুরু হয়। ফসল তুলতে তুলতে মার্চ-এপ্রিল হয়ে যায়। দানা পিয়াজ চাষ করার আগে ১০/১২ দফা চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুর করতে হয়। এরপর মাটিতে সার দিতে হয়। তারপর পিয়াজ রোপণ করতে হয়। এর মধ্যে প্রতি ১৫ দিনে একবার সেচ দিতে হয়। মাটি শুষ্ক হলে দুইবার সেচ দিতে হয়। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুর ঝুর করে দিতে হয়। ভাঙ্গা পৌরসভার চাষি ছিদ্দিক তালুকদার এ বছর ১০ বিঘা জমিতে লাল তীর নামক পিয়াজের দানা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পিয়াজের দানা চাষে খাটনি বেশি হলেও অনেক লাভজনক। ঝড় বা শিলাবৃষ্টিতে খেতের ক্ষতি না হলে এতে লোকশান হওয়ার ভয় নেই। বরং লাভ অনেক বেশি। ভাঙ্গার চান্দ্রা ইউনিয়নের লোহারদিয়া গ্রামের চাষি শাহজাহান হাওলাদার এ বছর ৪ বিঘা জমিতে দানা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার কৃষকরা দানা চাষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বেশ স্বাবলম্বী।
চাষিরা জানান, ফরিদপুরে উৎপন্ন পিয়াজের বীজ পাবনা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। মধ্যস্বত্ব¡ভোগী বা দালাল ফড়িয়ার মাধ্যমে এ দানা বিক্রি করতে হয় না। অন্য জেলার কৃষক বাড়ি এসেই কিনে নিয়ে যান পিয়াজের দানা।উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান খান ও এমএম সাফিনুর হাসান জানান, এ এলাকায় চার জাতের দানা পিয়াজের আবাদ হয়। এগুলো হলো তাহেরপুরী, বারি পিয়াজ-১, ফরিদপুরী ও লালতীর কিং। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোল্লা মামুন বলেন, দেশের পিয়াজ চাষিদের জন্য যে দানার প্রয়োজন হয়, তার বড় একটি অংশের জোগান দেয় ভাঙ্গার দানা চাষিরা।