দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায় এখনো সমাজে অবহেলিত। শুধু পরিচয়ের কারণে সরকারি সেবা পেতে পদে পদে ঘুষ দিতে হয় তাদের। এই ঘুষের পরিমাণ ২০ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বৈষম্য বিলোপ আইন পাসসহ সংবিধান ও আইন সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী : অধিকার ও সেবায় অন্তর্ভুক্তি চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী আদিবাসী ও দলিতরা এখনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি। তারা সর্বক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও নানা হয়রানি ও বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয়, যা শুধু পরিচয়ের কারণে। অথচ আমরাই এ ধরনের বৈষম্য বঞ্চনার কারণে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু পরিচয়ের কারণে যে কোনো ধরনের অধিকারপ্রাপ্তি ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের চরম বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বহির্বিভাগ, রোগ নির্ণয়, সন্তান প্রসব ও প্রসূতি সেবা কার্ড পেতে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায় করার তথ্য পাওয়া গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, দলিত ভাতা, গৃহনির্মাণ ও মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। স্থানীয় সরকার থেকে জন্ম সনদ, আদিবাসী সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে এবং শালিসের জন্য সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। একইভাবে জমি বিক্রি ও জলমহাল ইজারা নিতে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১৩ হাজার টাকা ও চাকরির জন্য ছয় লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের তথ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে।