শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

লবণাক্ত জমিতে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

লবণাক্ত জমিতে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ

খুলনায় লবণসহিষ্ণু ‘বারি হাইব্রিড ভুট্টা’র নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষকরা। পরীক্ষামূলক এ চাষে মিলেছে দারুণ সফলতা। প্রথমবারের মতো খুলনার বটিয়াঘাটার দেবিতলায় কৃষকের জমিতে পরীক্ষামূলক- ভাবে এ চাষ করা হয়েছে।

অপেক্ষাকৃত শুষ্ক লবণাক্ত জমিতে চারা রোপণ ও বীজ বপন- দুই পদ্ধতিতেই এ ভুট্টার আবাদ করা যাচ্ছে। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর রোপা আমন ধান কাটার পরপরই চাষ ছাড়াই ভুট্টার বীজ রোপণ করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে দেরিতে ‘জো’ আসায় (ভেজা অবস্থা) ২০-২৫ দিনের চারা রোপণও করা যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় নতুন জাতের এই ভুট্টার চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে বহুলাংশ পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা যাবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে মাটি ও পানির লবণাক্ততা, এঁটেল মাটির আধিক্য ও সেচের পানির অভাবে অধিকাংশ জমি পতিত অবস্থায় থাকে। এক সময় তিল ও মুগ ডাল চাষের জন্য খুলনা অঞ্চল বিখ্যাত থাকলেও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এখন তা বিলুপ্তির পথে। জমিতে পরপর কয়েক বছর তিল ও মুগ ডাল চাষে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে এক ফসলি রোপা আমন ধানের আবাদের পর অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকে। লবণাক্ত জমিতে জোয়ার-ভাটার কারণে দেরিতে ‘জো’ আসা ও একইসঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে ঘরে ফসল তোলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবে খুলনার বটিয়াঘাটায় ‘লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র’ লবণসহিষ্ণু বারি হাইব্রিড ভুট্টার নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এতে ‘জো’ আসার এক থেকে দেড় মাস আগে জমিতে চারা রোপণ ও বীজ বপন করতে হয়। এর ফলে জমি লবণাক্ত হওয়া ও ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়। আর জমিতে ধানের পর ভুট্টা আবাদের সুযোগ পেয়ে কৃষকরাও খুশি। স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ধান কাটার পর মাটিতে যখন ‘জো’ থাকে তখন এই ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। বিনা চাষে, কোনো পরিচর্যা ছাড়াই চারমাস পর এপ্রিল মাসে ভুট্টা উত্তোলন করা যায়। একর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ টন। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। তারা এরই মধ্যে ভুট্টার নতুন এই জাতের বীজ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, বিনাচাষে ভুট্টা আবাদের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ যেমন কমবে, তেমনি পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনায় উৎপাদিত ফসলে খাদ্য ঘাটতি কমবে। তিনি বলেন, গবেষণা কেন্দ্রের সফলতা পাওয়ার পর এ বছর কেন্দ্রের বাইরে বটিয়াঘাটার দেবিতলায় ১৫ জন কৃষকের প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক ভুট্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান কুমার ভা ার বলেন, প্রতিবছর দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ লবণাক্ত জমি পতিত অবস্থায় থাকে। এই পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে কৃষি গবেষকরা কাজ করছেন। লবণসহিষ্ণু ভুট্টার আগাম চাষ পদ্ধতি কৃষকের ফসলের মাঠ সবুজে ভরে তুলবে। পাশাপাশি কৃষক অথনৈতিকভাবে লাভবান হবে ও দেশে খাদ্য ঘাটতি কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর