পৌনে তিন বছর আগে গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, চিনিকলের কর্মকর্তাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের গাইবান্ধা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আসামির তালিকায় গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ, ইউপি সদস্য শাহ আলম ও আইয়ুব আলী এবং রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) নাজমুল হুদাসহ ৯০ জনের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, আসামিদের মধ্যে ২৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া সাঁওতাল পল্লী থেকে লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। কিন্তু ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গ করা হচ্ছে অভিযোগ করে দখল ফিরে পেতে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে। ওই বছর ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে চারজন সাঁওতাল তাতে আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়।
বিক্ষুব্ধ সাঁওতালদের ঢাকা-দিনাজপুর সড়ক অবরোধ : সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারকৃত প্রধান আসামি গোবিন্দগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখেন সাঁওতালরা। ফলে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এর আগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী পল্লী মাদারপুর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে তিন শতাধিক সাঁওতাল ওই এলাকায় এসে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এই অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, আদিবাসী নেতা বার্নাবাশ, প্রিসিলা মুরমু, স্বপন শেখ, সুফল হেমব্রম, হবিবুর রহমান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা প্রমুখ।সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, মামলা দায়েরের প্রায় তিন বছর পর পুলিশ অভিযোগ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। সেই প্রতিবেদনে মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এই চার্জশিটের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে এই মামলার চার্জশিট সংশোধন করে থমাস হেমব্রম কর্তৃক ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে যে মামলা করা হয়েছে তার আলোকে পুনরায় চার্জশিট প্রদান করা হোক।
সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আগামী ৩০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও ১০ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।