আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটিতে ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে নতুন ভাবনায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ডিসেম্বরের শেষে দিকে নির্ধারিত হওয়ায় ঢাকার ভোট নিয়ে ভাবছে কমিশন। বড় দুই দলের সম্মেলনের সময় ঢাকায় ভোট দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয়েও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু বিবেচনায় রেখে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে দুই ধরনের প্রস্তুতি রাখছে কমিশন। প্রথমত- ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুধু ঢাকার দুই সিটিতে ভোট অনুষ্ঠান করা। দ্বিতীয়ত- আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে একই দিনে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট করা।
গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া আগামী ২১ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন- ডিসেম্বরে ঢাকায় দুই দলের সম্মেলন থাকায় ওই সময় ভোট না দেওয়ার বিষয়ে ইসির কাছে অনুরোধ এলে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে কমিশন। এদিকে একই সময়ে ভোট ও সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে দুই দলেরই সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন নেতারা। ডিসেম্বরে ঢাকা সিটির ভোট ও সম্মেলন অনুষ্ঠানে সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন- সমস্যা হবে। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সম্পাদকম লীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন- ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকার দুই সিটিতে ভোট করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৬, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক তারিখ চিন্তা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট হলে ১৭ নভেম্বরের পরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে কমিশনকে। আর মার্চে হবে চট্টগ্রাম সিটির ভোট গ্রহণ। কোনো কারণে যদি ডিসেম্বরে ঢাকার দুই সিটিতে ভোট গ্রহণ সম্ভব না হয়, তবে আগামী বছর মার্চে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একই দিনে ভোট করবে কমিশন। এক্ষেত্রে মার্চে ভোট করতে জানুয়ারির-শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল দেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন- ডিসেম্বর, না মার্চে ভোট তা সরকারের ওপর নির্ভর করছে। ইসি ভোটের প্রস্তুতি রাখছে। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে কমিশন। এই তিন সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠানে ইসির প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও চলছে নানা আলোচনা। মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলাপ হচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল একই দিনে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটির ভোট হয়েছিল। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে যে কোনো সময় ভোট করতে হবে। সেই হিসাবে ঢাকা উত্তরের মেয়াদ হবে আগামী বছরের (২০২০ সালের) ১৩ মে পর্যন্ত; আর দক্ষিণে ১৬ মে পর্যন্ত। চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে (২০২০ সালের) ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নির্বাচনের উপযোগী হচ্ছে চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এবং চট্টগ্রাম নির্বাচনের উপযোগী হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ডিসেম্বরে ভোট হলে পুরাতন ভোটার তালিকা দিয়ে যাতে ভোট করা যায় সেই প্রস্তুতি রাখছে ইসি। আর মার্চে ভোট করতে হলে নতুন ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট হবে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। ইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন- ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকার দুই সিটিতে ভোট করতে হলে ১৭ নভেম্বর বা এরপর ইসিকে নির্বাচনের তফসিল দিতে হবে। এক্ষেত্রে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন ৩৮ থেকে ৪২ দিন সময় পাবেন।