আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এখন নেতা-কর্মীর ভিড় লেগেই আছে। এদিকে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করায় খুশি আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা। হাইব্রিডদের কারণে দলের সুসময়ে যেসব নেতা ভিড়তে পারেননি, আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা এখন সক্রিয় হয়ে উঠছেন। আর কপালে ভাঁজ পড়ছে বিতর্কিতদের। পদচ্যুত হওয়ার টেনশনে রয়েছেন তারা। গত দুই দিন ধানমন্ডি কার্যালয়ে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যরা বলছেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দল থেকে আগাছা-পরগাছা ছেঁটে ফেলতে চান। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগে নতুন রক্তের সঞ্চার ঘটাতে চান। এজন্য তিনি পরীক্ষিত, শিক্ষিত ও ত্যাগীদের জায়গা দিতে চান। দল ও সহযোগী সংগঠনে কাকে কোথায় বসাবেন- এমন একটি প্রাথমিক তালিকা দলীয় প্রধান তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনগুলোর আসন্ন সম্মেলনে তরুণ, মেধাবী ও ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতৃত্ব আনা হবে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কমিটি উপহার দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা খুশি হলেও চলমান অভিযানে রাঘববোয়ালরা ধরা না পড়ায় কিছুটা হলেও মন খারাপ করেছেন। রাঘববোয়ালরা ধরা পড়লে, জামায়াত-শিবির থেকে আগত নেতা-কর্মীরা বিতাড়িত হলে, মাঠের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের জন্য রাজনীতিটা সহজ হতো।’ জানা গেছে, দলের তিন সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়ার পর চাঙ্গা হতে শুরু করেছেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। সংগঠনগুলোর কার্যালয়গুলোয় নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন আটকে থাকা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন। তারা যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-অফিসে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই পদপ্রত্যাশী নেতার ভিড়। বিকালে বেশি ভিড় বাড়ে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যখনই কার্যালয়ে আসেন, সাবেক ছাত্রনেতাসহ অন্যরাও এগিয়ে যান গাড়ির দিকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশারীরা ভিড় জমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রবেশের সময়। কৃষক লীগের নেতারা দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আবদুর রাজ্জাকের। কয়েক দিন ধরে ধানমন্ডিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের আনাগোনাই বেশি। আবার বিগত সময়ে যারা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন, এখন কোনো পদ-পদবিতে নেই, কিংবা অভিমান করে নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা আবার সক্রিয় হচ্ছেন। দলে শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ সামনে চলে আসায় গা ঢাকা দিয়েছেন সংগঠনের ভিতরে থাকা সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন দীর্ঘদিন কোণঠাসা নেতা-কর্মীরা। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়ের পাশাপাশি পার্টি অফিসকেন্দ্রিক যাতায়াত বাড়িয়েছেন। শেখ হাসিনার সুনজর পেতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গণভবনেও যাতায়াত বাড়িয়েছেন অনেকে। মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের মাঠে দেখা যায়। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায় না। দিবসভিত্তিক কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেই বছর পার করেছেন তারা। ফলে শেখ হাসিনার সম্মেলনের নির্দেশনার পর রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন দেখা গেছে। এসব সংগঠনের বর্তমান প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব কমতে শুরু করেছে। ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ায় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা খুশি। অভিযান শুরু এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীর ভিড় লেগেছে। কারণ নেত্রী এবার ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করবেন। আমরা সেই আশায় আছি।’